২৬ বছর পর কারামুক্ত হলেন শিবির ক্যাডার নাছির

ইমরান নাজির।

২৬ বছর পর কারামুক্ত শিবিরক্যাডার নাছির
শিবিরক্যাডার নাছির উদ্দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ধরপাকড়ে বেশ কয়েকবার হাত ফসকে যান। ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সরকার পতনের ৬ দিনের মাথায় ২৬ বছর ৪ মাস পর সেই নাছির মুক্ত হলেন।

রবিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। চট্টগ্রাম কারা ফটক থেকে তাকে বরণ করতে পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

নাছিরের ছোট ভাই জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘অনেক বছর পর আমার ভাই আমাদের মাঝে এসেছেন। আমরা অনেক আনন্দিত।’

জানা গেছে, নাছিরের রাজত্ব ছিল পুরো চট্টগ্রামজুড়ে। এলাকা ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণে ছিল তার কর্মী বাহিনী। শত শত যুবক ছিল তাঁর বাহিনীতে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম কলেজসংলগ্ন এলাকায় তাকে ধরতে একবার বড় অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নাছিরের লোকজন ভারী অস্ত্র দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাক করে। তখন প্রায় দেড় হাজার গুলি ছোড়ে নাছির বাহিনী। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের দুটি গাড়ি । এরপরও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

একই বছরের শেষের দিকে আবারও সেখানে অভিযান চলে। ওই অভিযানে ৭-৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় ‘বিডিআর’ সেলিমসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলে আবারও ফসকে যান নাছির। এভাবে আরো বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। শেষে ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন নাছির।

তখন তিনি টগবগে এক যুবক। ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ সংবাদ পায় চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ছাত্রাবাসের সামনে শিক্ষকদের পরিত্যক্ত ভবনে তৎকালীন অভিযুক্ত নাছির আত্মগোপন করে আছেন। কক্ষের বাইরে তালা লাগিয়ে ভেতরে নাছিরকে নিরাপদে রাখতেন তার অনুসারীরা। এ তথ্যের সত্যতা পেয়ে সাদা পোশাকে ভবনের চারপাশে অবস্থান নেন গোয়েন্দা পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৪টায় কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে নাছির জানালা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে জাপটে ধরেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আতিকুর রহমান চৌধুরী।

নাছিরকে আটকের ঘটনা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে তার অনুসারীদের কাছে। চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ছাত্রাবাস থেকে শিবিরক্যাডাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশও পাল্টাগুলি ছুঁড়ে। পুলিশের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় একাধিক পুলিশ আহত হন। এরপর নাছিরের অনুসারীরা চকবাজারের আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করে।

গ্রেপ্তারের পর প্রথমে চট্টগ্রাম কারাগারে, পরে নোয়াখালী কারাগারে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।

জানা গেছে, নাছিরের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী, হাটহাজারী ট্রিপল মার্ডার, চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে জমির উদ্দিন হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন সময় ৩৬টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে সাক্ষী না পাওয়ায় ৩১টি মামলায় খালাস পান তিনি। তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় একে একে জামিন পাওয়ার পর নাছির কারামুক্ত হলেন। এর বাইরে কয়েকটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে তার সাজাও হয়। দুটি মামলায় সাজার মেয়াদ ভোগ করে ফেলেছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক