দেওয়ানহাটের সমাবেশ থেকে বাম নেতাসহ আটক ৩

ওয়াসিম জাফর।

দেওয়ানহাটে সমাবেশে পুলিশি বাধা, বাম নেতাসহ আটক ৩
চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ ও হয়রানির প্রতিবাদসহ ৭ দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকের সময় তাদের গায়ে হাত তুলেছে পুলিশ—এমন অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, অনুমতি ব্যতীত সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। ওই সমাবেশের পূর্বানুমতি ছিল না। আর সেখানে উপস্থিত একজনের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। আর তারা পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করেছেন। তাই ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল সোয়া ১১টার দিকে নগরের দেওয়ানহাট মোড় এলাকায় ‘রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ শুরুর আগেই এ ঘটনা ঘটে।

আটকদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের জেলা আহ্বায়ক ও বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ইনচার্জ আল কাদেরি জয়, ছাত্র ফ্রন্টের নেতা মিনহাজ উদ্দিন এবং রিকশাচালক মো. রুকন।

জানা গেছে, সারাদেশে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলো। যার মধ্যে আছে—নীতিমালা অনুযায়ী ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট দেওয়া, কারিগরি ত্রুটি সংশোধন করে ব্যটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন।

তাদের দাবি, ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলো লাখ লাখ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের এবং টেকসই পরিবহন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মনির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘সকাল সোয়া ১১টার দিকে আমরা প্রায় দেড়শ জন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলাম। আরো অনেকে কর্মসূচিতে যোগ দিতে পথে ছিল। আমাদের নেতৃবৃন্দ একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়াতেই পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের ব্যানার কেড়ে নেয় এবং মাইক ভাঙচুর করে। সেখান থেকে আমাদের আহ্বায়কসহ তিনজনকে আটক করে।’

পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘আটকের সময় মিনহাজকে প্রচুর মারধর করা হয়। আরও কয়েকজন আহত হয়েছে। আমি একজনকে মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। পুলিশ বলেছে, আমরা আন্দোলন করতে পারব না। তখন আমরা বলেছি দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত ৭ দফা দাবিতে এই আন্দোলন আমরা করে আসছি। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। আমরা কোন সহিংস আন্দোলনও করিনি কখনো। আমরা ইজিবাইকের নীতিমালার জন্য কাজ করছি, কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ করিনি।’

‘এখন দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে। আমরা একটি যৌক্তিক দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। রাস্তায় ব্যারিকেড দিইনি বা কোনো কিছু ভাঙচুর করিনি। কর্মসূচি শুরুর আগেই এভাবে হামলা করে গ্রেপ্তার করতে পারে না পুলিশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং আটকদের অবিলম্বে মুক্তি না দিলে সারা বাংলাদেশে এই আন্দোলন জাগ্রত হবে।’ বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম চট্টলার কন্ঠকে বলেন, ‘ওদের একটা অবৈধ সমাবেশ ছিল। সমাবেশের কোনো পূর্বানুমতি ছিল না। ওরা এসে দেওয়ানহাট মোড়ে গাড়ি-রাস্তাঘাট বন্ধ করছিলো। বোঝাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেছে। একপর্যায়ে আমরা তিনজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করি।’

মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারাতো বলবেই। তাদের মারধর কেন করা হবে? আটকদের মধ্যে হালিশহর থানায় হওয়া একটি মামলার আসামি আছে একজন। তার নাম জয়। তিনি ওই সংগঠনের আহ্বায়ক। বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা আছে কি-না—যাচাই বাছাই চলছে।’

ব্যাটারিচালিত রিকশা নগরের সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে—নগরবাসীর এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। অলিগলি ছেড়ে মূল সড়কেও ‘অবৈধ’ এসব রিকশার দাপটে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। আর অদক্ষ এসব চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণও।

গত ১৯ এপ্রিল নগরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা খালে পড়ে মৃত্যু হয় ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিশের। স্থানীয়দের দাবি, ওই রিকশাটির গতি ছিল খুব বেশি। যে কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

এরপরই নগরজুড়ে শুরু হয় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান। পরে ২৩ এপ্রিল চান্দগাঁও এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেশ কয়েকজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। যে ঘটনায় গ্রেপ্তার আছে অর্ধশতাধিক।

উল্লেখ্য, চলতি মাসে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নগর ট্রাফিকের চারটি বিভাগ তিন হাজার ১৬৮টি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করেছে। এর মধ্যে সিএমপির দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগ ৯১৩টি, উত্তর বিভাগ ৯১৮টি, পশ্চিম বিভাগ এক হাজার ১৬৮টি এবং বন্দর বিভাগ জব্দ করেছে ১৬৩টি ব্যাটারি রিকশা। এসব রিকশা সিএমপির মনসুরাবাদ ও সদরঘাটে ডাম্পিং করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক