ইয়াসিন বায়েজিদ হিরু।
তিন দশক আগে র্যাব–পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে শিবির নাছিরের নাম শুনলে আতঙ্কিত হয়ে উঠতেন চট্টগ্রামের অনেক বাসিন্দা। তিন খুন, জোড়া খুনে সম্পৃক্ত নাছির গড়ে তুলেছিলেন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিলেন, আতঙ্ক ছড়াতে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তেন তাঁরা। চট্টগ্রামের মায়েরা নাছিরের নাম বলে ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম আমলে এক দিন তাঁকে ধরে ফেলে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে নাছির বলেছিলেন, এক মিনিট আগে জানতে পারলে পুলিশ তাঁকে ধরতে পারত না। তিনি নিজে এবং সহযোগীরা এসে গুলি করতেন পুলিশ সদস্যদের।
২৮ বছর ধরে কারাবন্দি নাছির উদ্দিন গত এক সপ্তাহের (গত ৩০ ও ২৩ জুন) মধ্যে দুটি মামলায় জামিনের আবেদন করেছেন। আদালত তাঁর দুই আবেদনই নাকচ করে দিয়েছেন। তবে নাছির এ সময়ে এসে কারাগার থেকে বের হওয়ার আবেদন করায় তাঁর বিষয়টি আবার সামনে আসছে। নাছিরের বিরুদ্ধে হওয়া ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩১টিতে খালাস, দুটিতে সাজা হয়। কিন্তু কারাভোগ আগ থেকে করায় তাঁর ওই দুই মামলার সাজা নতুন করে খাটতে হয়নি। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা চলছে। হাটহাজারীর মন্দাকিনী এলাকার এলাহী বক্সের ছেলে নাছির। ১৯৮২ সালে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
নাছিরকে সর্বপ্রথম নগরের চকবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেপ্তার করেন সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। ঘটনার সময় ১৯৯৩ সালের মে মাসে তিনি চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে নাছির জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাস থেকে নাছিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন।
নাছিরের ছোট ভাই জিয়া উদ্দিন আজ শুক্রবার বিকেলে চট্রলার কন্ঠকে বলেন, তাঁদের এক চাচাতো ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে নাছির এ পথে পা বাড়ান। একই সঙ্গে ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২৬ বছর ধরে তাঁর ভাই কারাগারে আছেন। আজ কারামুক্ত হলো তার ভাই।
এখন সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ভালোভাবে চলতে চান। তার ভাইকে অনেকে অনেক রকম ভাবে ব্যবহার করেছেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের কন্ঠকে বলেন নাছির খুবই দুর্ধর্ষ,অত্যন্ত সাহসী একজন সন্ত্রাসী ছিলেন। তাঁর বাহিনী নাছির বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। তাঁদের বিশাল অস্ত্র ভান্ডার ছিল। নাছিরকে পুলিশও ভয় পেত। তাঁকে গ্রেপ্তারে ফটিকছড়িতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নগরের চকবাজারের একটি রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় নাছিরের সহযোগীদের মধ্যে শুধু বাবুল নামের একজন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বাবুলের কাছে অস্ত্র ছিলো না। নাছিরের কাছে অস্ত্র থাকলেও কিছু করার আগেই তাঁকে ধরে ফেলা হয়েছিল। পরে নাছির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, আর এক মিনিট সময় পেলেই তাঁর সহযোগীরা এসে পুলিশ সদস্যদের গুলি করতেন। আর তাঁকে ছিনিয়ে নিতেন।
চট্টগ্রামের নাসিরের নাম শুনলেই মানুষ ভয় পেত এবং আতঙ্কিত হতো,মায়েরা তাদের সন্তানদের নাসিরের ভয় লাগিয়ে ঘুম পাড়াতেন।