পুলিশের আড়াই শতাধিক এসআইকে অব্যাহতি

নিউজ ডেস্ক

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি থেকে ক্যাডেট এসআই ৮২৩ জনের মধ্যে ২৫২ প্রশিক্ষণার্থীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক) তারেক বিন রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। স্থানীয় থানাগুলোতে ডেকে তাদের হাতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) এডিশনাল ডিআইজি মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ক্যাডেট এসআই সদস্যদের ট্রেনিং শুরু হয়েছিলো। এটি শেষ হবার কথা ছিল ৪ নভেম্বর।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্যারেড মাঠে ১ অক্টোবর সকাল ৭টা ২৫ মিনিট থেকে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) প্রবেশনারস ব্যাচ–২০২৩–এর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন প্যারেড কার্যক্রম চলমান ছিল। এ সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহী কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত মেনু অনুযায়ী প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব প্রশিক্ষণার্থীর প্যারেড বিরতিতে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু আপনি উক্ত সরবরাহকৃত নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। আপনি অন্যান্য প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের পরস্পর সংগঠিত করে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেয়প্রতিপন্ন করে চরম বিশৃঙ্খলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। এ ছাড়া আপনি অন্যদের সঙ্গে হইচই করতে করতে নিজের খেয়ালখুশিমতো প্রশিক্ষণ মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যান। একজন প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই হিসেবে এরূপ আচরণ এবং বিনা অনুমতিতে প্যারেড মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে শৃঙ্খলাপরিপন্থী। আপনার এরূপ আচরণ মাঠের সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করেছে এবং অন্য প্রশিক্ষণার্থীদের শৃঙ্খলাভঙ্গে উৎসাহিত করেছে মর্মে আপনার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পুলিশ পরিদর্শক মহসিন আলী (বিপি- ৬৯/৮৭০০১৫২০) বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত আইজিপি) বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।’

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ওই অভিযোগের কারণে একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) তিন দিনের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দেন। আপনি নির্ধারিত তিন দিন সময়ের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করেন। আপনার দাখিলকৃত কৈফিয়তের জবাব পর্যালোচনান্তে সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। আপনার উপরোক্ত শৃঙ্খলাবিরোধীকর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদ হিসেবে বিবেচিত সাব–ইন্সপেক্টর পদে কাজ করার পথে বড় ধরনের অন্তরায় ও অযোগ্যতার শামিল।’

এর আগে ২০ অক্টোবর চারঘাটে পুলিশ একাডেমিতে ৬২ জন সহকারী পুলিশ সুপারের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ জন্য রাজশাহীতেও এসেছিলেন। তখন তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনিবার্য কারণে এই কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজন উপপরিদর্শক জানান, ওই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আগে ৪০তম ক্যাডেট এসআই-২০২৩ ব্যাচের উপপরিদর্শকদের একাংশকে ১৯–২৩ অক্টোবর ছুটিতে পাঠানো হয়। আগের দিন ১৮ অক্টোবর এই ছুটি ঘোষণা করা হয়। ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টায় তাদের একাডেমিতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এর আগেই স্থানীয় থানাগুলোয় তাদের ২৫২ জনের বরখাস্তের আদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার ছুটি পাওয়া প্রশিক্ষণার্থীদের একাংশ যথারীতি যোগদান করেছেন।

এ সম্পর্কে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভুঞা বলেন, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে ‘ডিসচার্জ’ করা হচ্ছে। এটার প্রসেস চলছে। চিঠি ইস্যু হচ্ছে।’

এসআই পদে নিয়োগ চূড়ান্ত হয় যেভাবে

পুলিশে এসআই পদে চাকরির জন্য প্রার্থীকে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষা দিতে হয় কম্পিউটার চালানোর দক্ষতার ওপরও। এসব ধাপ পেরিয়ে প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এরপর চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থী ‘আউটসাইড ক্যাডেট’ হিসেবে সারদায় এক বছরের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

সাধারণত অক্টোবর–নভেম্বর মাসে আউটসাইড ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এই পাসিং আউটের পর মৌলিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসআইদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে মাঠপর্যায়ে কাজে পাঠানো হয়। সেখানে একবছর পূর্ণ হলে তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক