কলিম উল্লাহ, সাতকানিয়া প্রতিনিধি।
চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করেছেন একজন আওয়ামী লীগ নেতা! তার নাম সোলায়মান বাঁশি। তিনি উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। তবে জামায়াত নেতারা বলছেন, ‘ডেভিল’ চিনতে তাদের ভুল হয়েছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) উত্তর সাতকানিয়া-সাঙ্গু সাংগঠনিক থানা জামায়াতে ইসলামীর আওতাধীন বাজালিয়া ইউনিয়ন শাখার গণসংযোগ চলাকালে দলটির সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। সেই সময়কার একটি ছবি মুঠোফোনে ধারণ করে রাখেন উপস্থিত কেউ একজন ।
গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাত ১০ টার দিকে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওই এলাকায় এ ঘটনায় নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সোলায়মান বাঁশি চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পদবি ব্যবহার করে বন সাবাড় করে আসছেন। তিনি এলাকায় ‘বনখেকো’ হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া তিনি স্থানীয় বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের ‘দালাল’ হিসেবেও কাজ করতেন।
অনেকে বলছেন, সোলায়মান বাঁশি বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পলাতক চেয়ারম্যান তাপস দত্তের ঘনিষ্টজন ছিলেন। বিগত সরকারের সময় তিনি ওই চেয়ারম্যানের হয়ে নানা অপকর্মের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি বাজালিয়া এলাকায় তাপস দত্তের প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আওয়ামী শাসনামলে বিএনপি, জামায়াত ও এলডিপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, ভোটকেন্দ্র দখল ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে জামায়াতে যোগ দেওয়ার ঘটনা জানাজানির পর সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে বাজালিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাসুকুর রহমান ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ইসমাইল মো. রাশেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে এ ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বাজালিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ইসমাইল মো. রাশেদ তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘বাজালিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর গণসংযোগ চালাকালীন সময় ভুলবশত আওয়ামী শাসনামলের সবচেয়ে বড় ডেভিল সোলায়মান বাঁশিকে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ফরম পূরণ করা হয়েছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যিনি সহযোগী ফরম পূরণ করতে সহায়তা করেছেন তিনি অন্য ইউনিয়নের কর্মী হওয়ায় এ ডেভিলকে চিনতে পারেননি। সেদিন আমি গণসংযোগ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলাম না। আমি উপস্থিত থাকলে এ ঘটনা কখনো ঘটতো না। গতকাল রাতে ফরম পূরণের ছবিটা যখন আমার দৃষ্টিগোচর হয়; তখন আমি এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলেছি। আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান বাঁশির হাতে নির্যাতিত অনেক দায়িত্বশীল ও নেতাকর্মী আমাকে ফোন ও মেসেজ দিয়ে বিষযটি অবগত করেছেন। সর্বোপরি বিষয়টি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নির্যাতিত নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখবো।’
চট্রলার কণ্ঠকে এ বিষয়ে উত্তর সাতকানিয়া-সাঙ্গু সাংগঠনিক থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি আমি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছি। বাজালিয়া ইউনিয়নে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করানোর বিষয়ে আমি অবগত আছি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’