লেলিন মারমা, চট্রলার কন্ঠ।
বর্ষ বিদায় ও বরণকে ঘিরে উৎসবে মাতোয়ারা পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। পাহাড় জুড়ে এখন চলছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উৎসবের আনন্দ। বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সকাল থেকেই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে পৌরচত্বরে সমাবেত হতে থাকেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বেলুন উড়িয়ে ও বিজু নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে।
বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা বাহারি রঙের পোশাক তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। আর এসব ঐতিহ্যবাহী পোশাকের মাধ্যমেই সহজেই চেনা যাচ্ছে কে কোন সম্প্রদায়ে। বাংলা নতুন বছরের আগাম বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়াই হলো উদ্দেশ্য। তাইতো বেলুন উড়িয়ে ও বিজু নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
বেলুন উড়িয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার। এতে উৎসব উৎযাপন পরিষদের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটির চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় এবং অতিথি ছিলেন রাঙামাটির সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার।
বক্ত্যরা বলেন, প্রায় বিলুপ্তির পথে এই সংক্রান্তি উৎসবকে কেবল পাহাড়ে মানুষ টিকিয়ে রেখেছেন। এই অনুষ্ঠানে আমাদের অস্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলে। বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠান পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর নৃত্তের মাধ্যমে অতিথিদের বরণ এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি রাঙামাটি পৌরসভার সামনে থেকে শুরু হয়ে শিল্পকলা একাডেমী পাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার আদায়ে ছিলেন সোচ্চার। উৎসবে যোগ দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অধিকার আদায়ের দাবি তুলেছেন অনেকে।
৯ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালার মধ্যে রয়েছে বলি খেলা, কবিতা পাঠ, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর নানা খেলাধুলা, কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো।