আদালত প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিবর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলা নিয়ে আইনজীবীর সাথে বিচারকের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। হট্টগোলের একপর্যায়ে বিচারক এজলাস থেকে নেমে চলে যান। এ ঘটনার পরপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অন্য বিচারকরাও এজলাস থেকে নেমে যান।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নগরের পাঁচলাইশ থানার বাসিন্দা সোয়াইবুল হক চৌধুরী গত ১৭ জুলাই মুরাদপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হন। এ ঘটনায় তিনি মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে যান। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া জেলা পিপি আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক।
এ সময় আদালত বাদীর কাছে আসামিদের নাম জানতে চান। বাদী শুরুর দিকের ১০-১৫ জন আসামির নাম বললেও পরে আর বলতে পারেননি। তখন আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বিচারককে বলেন, ‘এভাবে সব আসামির নাম বলা সম্ভব নয়। এ নিয়ে বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে তর্ক শুরু হয়। বাদীর আইনজীবী শুনানিতে মামলার অভিযোগ গ্রহণ করে থানায় এজাহার হিসেবে গণ্য করার আবেদন জানান। তবে হট্টগোলের একপর্যায়ে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন।’
বাদীর আইনজীবীর অভিযোগ, পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি চলে আসার সময় বিচারক তাকে উদ্দেশ্য করে ‘কটূক্তি’ করেন।
তবে এ ব্যাপারে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা-গুলি বর্ষণের ঘটনায় ১২৬ জনকে তালিকাভুক্ত আসামি করে এবং ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ’র আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়। যে মামলার সমিতির পক্ষ থেকে আমি যেহেতু সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি, আমাকে উনারা ডেকেছেন আমি ওই মামলাটার ফাইল করতে গিয়েছি। আমরা থানায় এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম।’
চট্রলার কন্ঠকে অ্যাডভোকেট আশরাফ বলেন, ‘স্যার বলেছেন, দেখে আদেশ দিবেন। তাই আমরা স্যারের আদেশকে সম্মান জানিয়েছি। আদালত জবানবন্দি নিয়েছেন, ওই জবানবন্দির প্রেক্ষিতে বাদীকে আসামিদের নাম বলতে বলা হয়েছে। উনি এক এক করে ১৮ থেকে ২০ জন আসামির নাম বলেছেন। বিচারক ১২৬ জন আসামির মধ্যে সব আসামির নাম এবং পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে অভিযোগ বলতে বলেছেন। তখন আমি বলেছি, আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, আমরা এর ভিডিও ফুটেজ দিয়েছি এখানে। বাদী যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেটির ডাক্তারি সনদ দিয়েছি, ছবিগুলো দিয়েছে। উনি বলেছেন, ঠিক আছে। এরপর তিনি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের পেশাদারিত্বের নিয়ম অনুযায়ী, আদালতকে সম্মান জানিয়ে চলে আসছিলাম।’
‘এর মধ্যেই তিনি (বিচারক) মন্তব্য করেছেন, ‘এ ধরনের ইয়ে নিয়ে আমার আদালতে আসবেন না। আমার আদালতের কোনো ধরনের জোর চালাইতে আসবেন না। কোনো ধরনের ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবেন না।’ আমি তো কোনো ধরনের ইন্টারফেয়ার করিনি; আমরা আবেদন করেছি। এরপরই তিনি এজলাস থেকে নেমে গেছেন।’— অভিযোগ করেন অ্যাডভোকেট আশরাফ।
আইনজীবী রাজ্জাক আরো বলেন, ‘আমাদের সমিতির পক্ষ থেকেও ডিমান্ড হচ্ছে সরকারের কাছে, আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে; যেহেতু উনার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে অভিযোগ আছে। এসব নিয়মিত করছেন তিনি। সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে অসদাচরণ করছেন। আমরা অনেকভাবে এটা জানিয়েছি; এখনো পর্যন্ত আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’
এদিকে, ওই ঘটনার পরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অন্য বিচারকরাও এজলাস থেকে নেমে যান। পরে ম্যাজিস্ট্রেটরা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কক্ষে বৈঠকে বসেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ ছাড়া বাকিরা দুপুরের পর এজলাসে বসেন।
বাদী সোয়াইবুল হক চৌধুরীর করা ওই মামলার আবেদনের এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ জুলাই রাতে পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর মোড়ে আসামিরা অস্ত্রসহ বৈষম্যনিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় বাদী আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে ঘাড়ে, পিটে, উভয় হাতে এবং পায়ের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হন। পরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম, সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ডা. শফিউল আজম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, বিএমএর কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. আরিফুল আমীন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, স্বাচীপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান প্রমুখ।