পুরনো গান গাইছেন চসিকে কর্মকর্তারা

ইমরান নাজির

‘গেট বান, গেট বান’ — বলাতেই ব্যবসায়ীকে ধরে মারধর করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা! ১১ লাখ টাকার দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে নগরের আগ্রাবাদে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) ব্যবসায়ীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

চসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. লতিফুল হক কাজমী ওই ব্যবসায়ীকে ধরে মারধর করেন।

nagad

মারধরের শিকার ব্যবসায়ীর নাম মনির হোসেন বাপ্পী। তিনি সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক। যদিও এ ঘটনায় মাহমুদুল হক জামশেদ নামের আরও একজন আহত হয়েছেন। তিনি সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সচিব।

তবে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. লতিফুল হক কাজমীর দাবি, কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ‘গেট বান, গেট বান (গেট বন্ধ কর) উচ্চবাচ্যের পরই ওই ব্যবসায়ীকে তাঁরা মারধর করেছেন। মূলত ‘আত্মরক্ষার্থে’ মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে বলছেন তিনি।

প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. লতিফুল হক কাজমী সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আত্মরক্ষার জন্য ওই ছেলের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। তারা বলছিল গেট বান (বন্ধ), গেট বান। তারা তো গেট বেঁধে আমাদেরকে মারবে! আমাদেরকে মারতে এলে আমরা কি চুপ করে বসে থাকবো? কেউ একজন তো এগিয়ে আসতে হবে। এক হাতে তো তালি বাজে না। তারা এই জিনিসগুলো না করলে তো এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।’

‘১৫ মিনিটের ভিডিও পেলে আপনারা পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হতে পারবেন সে যে লেভেলের বেয়াদবি করছে! ঘটনা হচ্ছে তারা টাকাটা ধান্ধা করতে চাইছে আমরা কর্পোরেশন জেনে গেছি।’— বলেন চসিকের এই কর্মকর্তা।

অন্যদিকে এ ঘটনায় কোনো সুরাহা না হলে আইনি পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান চৌধুরী। এ নিয়ে শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় সমিতির কার্যালয়ে সভা ডাকা হয়।

জানতে চাইলে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘দোকানটি সিটি কর্পোরেশনের এক সাবেক কর্মকর্তার। তিনি তার দোকান ১১ লাখ টাকা জামানতে এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী অনেকের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। এরপর থেকে দোকানটি বন্ধ রাখে মালিক সমিতি। এই ১১ লাখ টাকা দোকানের মালিককে দেওয়ার জন্য বলেন সমিতির লোকজন। কিন্তু তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে দোকানটি আরেকজনকে ভাড়া দিতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, আগের লেনদেন ক্লিয়ার না করে কীভাবে আরেকজন ভাড়া দিবেন। তখন উনি (আবদুল মালেক) সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ডেকে এনে ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মারধর করেছেন করেছেন। সমিতির অফিস বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন তারা।’

তিনি আরও বলেন, একজনের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে এসে এভাবে ব্যবসায়ীর উপর সমিতির লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা করা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সরকারি কর্মকর্তারা এভাবে গায়ে হাত তুলবো, মারবে এটা কখনোই কাম্য না। আমরা ৮ তারিখ মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলবো। মেয়র মহোদয় কোনো সুরাহা না করলে আমরা আইনী পদক্ষেপ নিবো।’

জানা গেছে, আগ্রাবাদে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটে চসিকের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেকের একটি দোকান আছে। দোকানটি তিনি এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। সাত মাস আগে ওই ব্যবসায়ী দোকানে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। দোকানটি বুঝে পেতে চেষ্টা করেন আবদুল মালেক। সেই দোকান বুঝে দেওয়া নিয়েই মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, চসিকের দুই কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী একটি কার্যালয়ে দু’জনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। তবে ডান পাশে বসা মনির হোসেনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। সেখানে থাকা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রেজাউল করিম আসন ছেড়ে মনির হোসেনের দিকে তেড়ে যান এবং থাপ্পড় দিতে থাকেন। এরপর প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাও চড় থাপ্পড় দেন। পরে চসিকের এক নিরাপত্তা কর্মী লাঠি দিয়ে মারতে মারতে কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যান ব্যবসায়ী মনির হোসেনকে।

এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী সিভয়েসকে বলেন, ‘এখানে মার্কেটের মালিক তো সিটি কর্পোরেশন। ভদ্রলোক (আবদুল মালেক) আট নয় মাস ধরে উনার দোকান থেকে ভাড়া পাচ্ছে না। আর এরা (দোকান মালিক সমিতি) দোকান খুলতে দিচ্ছে না। আর এই ১১ লাখ টাকা যে মানুষের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট হয়েছে তাকে তো টাকাটা ফেরত দিতে হবে। এই টাকা তারা চাওয়ার কেউ না। কমিটিকে টাকা কেন দিবে? এই কমিটি কালকে থাকবে এই নিশ্চয়তার কি আছে? তারা তো টাকা চাওয়ার কেউ না। তারা বলতে পারে লিগ্যালি সমস্যাটা সমাধান করতে হবে। তারা এই টাকাটা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর এই অফিসটাই অবৈধ। তারা মার্কের্টের পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে অফিসটা বানিয়েছে।’

এর সঙ্গে যোগ করে তিনি আরও বলেন— তারা তো ১৫ মিনিটের ফুল ভিডিও দেয়নি। আমাদের লোকজন যখন তাকে পিটানো শুরু করছে তাকে তো আমি সেইভ করে দোকানে নিয়ে আসছি। আমার সঙ্গে যে বেয়াদবিটা করছে, আমি তখনও কিন্তু গায়ে হাত তুলিনি। আমি তাকে কথা আস্তে বলতে বলেছি, হাত নামিয়ে কথা বলতে বলেছি। সে বেয়াদবি করছিলো। এরমধ্যে কে যেন বলে উঠলো এই গেট বন্ধ করো। তখন এই ঘটনা ঘটে।

সরকারি কাজে কেউ বাধা দেওয়া ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মারধরের শিকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাপ্পী সিভয়েসকে বলেন, ‘উনাদের কথা অনুযায়ী আমি যদি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছি। কিন্তু আমি কোনো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করিনি। উনারা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমি কেন উনাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করলে আমার কী অবস্থা হবে তা তো আমি ভালোই বুঝবো। তাহলে আমি কেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে যাবো?’

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘যদি আমি করেও থাকি তাহলে উনারা আইন অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু উনারা আমাকে এমনভাবে মারছেন একটা চোরকেও এভাবে মারে না। আমি তো মারাও যেতে পারতাম। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক