একদিকে দোকানিরা মূল্য কমাতে নারাজ, অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন—‘ভাইয়া আমি একটা শেষ দাম বলি’? সতেরোতম রোজার রাত (বৃহস্পতিবার) তখন প্রায় দেড়টা। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়ে ব্যস্ত নগরের শতবর্ষী পুরনো টেরিবাজার। চলছে দর কষাকষি। রাতে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ কেনাকাটা করতে এসেছেন অনেকে। তবে দাম ছাড়তে চান না দোকানিরা।
গত পহেলা মার্চের পর থেকে ঈদকে ঘিরে ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে চট্টগ্রামের বৃহত্তম থান কাপড়ের এ বাজারে। ব্যবসায়িক এ এলাকায় সরু সরু গলিতেও বিক্রি চলছে রাতে । তবে তেমন বিক্রি হচ্ছে না বলে বলছেন দোকানিরা।
পরশমণি দোকানের মালিক মো. ইসমাইল বলেন, ‘সারা বছরের মোট বিক্রির ৪০ শতাংশই হয় রমজানে। তবে দ্রবমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের টার্গেট পূরণ করা সম্ভব কিনা এ বিষয়ে সন্দিহান।’
একই সুরে কথা বললেন সানা ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ। তিনি বলেন, ‘করোনা দখল কাটিয়ে গেল ২২ ও ২৩ সাল মোটামুটি বেচাবিক্রি বেড়েছিল। কিন্ত বর্তমানে মূলস্ফীতির সময় সাধারণ মানুষের ঈদবাজারে আগ্রহ কম থাকতে পারে। তবে আমাদের প্রস্তুতি আছে। আশা করি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিক্রির পরিমাণ বাড়বে।’
এদিকে দ্রব্যমূল্যের চড়া দামের এমন পরিস্থিতিতে ঈদ উপলক্ষে একটি কাপড় কেনাও বিলাসিতা মনে করছেন সাধারণ অনেক ক্রেতা। বিশেষত মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের কাছে কোনো পণ্যের দামই আর হাতের নাগালে নেই।
নগরের বাহির সিগন্যাল থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নাছিরুল হক সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘সর্বশেষ কাপড় কেনা হয়েছিল ২০২৩ সালের রোজার ঈদে। এখন পরিবারের জন্য কাপড় কেনা একটা বিলাসিতা। দ্রবমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে জামাকাপড় কেনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিলাসিতা। নেহাত ছোট দুই মেয়ে ও স্ত্রীর জন্য একটি করে পোশাক কেনার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু গত বছর যে জামা ৭০০ টাকা ছিল, সেই জামা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায়।’
টেরিবাজার এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, গত দুই বছরের তুলনায় কাপড়ের মূল্য বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। আমদানি খরচ বাড়তি থাকার কারণে কাপড়ের দাম বেড়েছে বলে জানান দোকানিরা। টেরিবাজারের পাইকারি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক বছরের তুলনায় কাপড়ে আমদানি খরচ বেড়েছে। এছাড়া দেশিয় কাপড় উৎপাদনের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।’
