ছাত্র আন্দোলনে গুলিকারী যুবলীগের ফিরোজ গ্রেপ্তার

মহসিন কামাল।

চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণ করা যুবলীগ নেতা ফিরোজকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব-৭)। নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিলেও তিনি মূলত ‘ডাকাত ফিরোজ’ নামেই পরিচিত। এছাড়া মুরাদপুর-বহদ্দারহাট এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মের হোতা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেনী জেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি চান্দগাঁও থানার মুরাদপুর এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ফিরোজসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত ক্যাডাররা ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। ওই দিন ১৬ বছর বয়সী দোকান কর্মচারী সায়মান প্রকাশ মাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় তার বন্ধু মোহাম্মদ শরীফ বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় ৪৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. শরীফ-উল-আলম জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, নাশকতা, মাদক এবং ছিনতাইসহ ৫টি মামলার রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

কে এই ফিরোজ?

সন্ত্রাসী ফিরোজ মূলত পরিচিত ‘ডাকাত ফিরোজ’ নামেই। একসময় ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবেও ছিল তার পরিচিতি। পরবর্তীতে তিনি যুবলীগ নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে পোস্টার-ব্যানার টানান। যুবলীগের মিছিল-সমাবেশেও দেখা যেতো সামনের সারিতে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরের প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে সন্ত্রাসীরা ১১ লাখ টাকা লুট করে নেয়। মারধর করা হয় একজন চিকিৎসককে। ডাকাতি ঘটনার পরদিন নগরের বায়েজিদ থানার কয়লাঘর এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ফিরোজ ও মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ফিরোজের পাঁচলাইশের আস্তানা থেকে ১২ রাউন্ড গুলিভর্তি দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন, একটি একনলা বন্দুক, একটি বন্দুকের ব্যারেল, তিনটি কার্তুজ, দুটি চাপাতি জব্দ করা হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালেই তখন ফিরোজ দাবি করেছিলেন, অস্ত্রগুলো দুর্ধুর্ষ ‘শিবিরি ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত ম্যাক্সন ও সরওয়ারের। এর মধ্যে ম্যাক্সন ভারতে মারা গেছেন বলে চাউর রয়েছে।

২০১৩ সালের ১৯ জুলাই রাতে তিন রাউন্ড গুলিভর্তি নাইনএমএম পিস্তলসহ আবারও ফিরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিও তিনি।

গত ১৬ জুলাই নগরের মুরাদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের হামলা করতে দেখা যায়। তাদের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা, পাথর, লাঠি, রামদা, ককটেল ও অস্ত্র। সেই সময় যুবলীগের ক্যাডার ফিরোজের শটগান হাতে গুলি লোড করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক