ওয়াসিম জাফর।
প্রথমে এক ভাই গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে মালামাল লুটের। পরেরদিন আরেক ভাই অস্ত্র-লাঠিসহ ‘গুন্ডা বাহিনীর’ অন্তত দুই শতাধিক সদস্য নিয়ে জড়ো হয় সেই প্রতিষ্ঠানে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে দাবি করে কোটি টাকার চাঁদা। সেই সঙ্গে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ বলেই শুরু করে মারধর। এরপর লুটপাট করে বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল।
চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীর মোহাম্মদ ট্রেডিং নামে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এমন ‘ফিল্মি স্টাইলে’ চাঁদাবাজি করতে যাওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপি নেতা মামুন আলী ওরফে কিং আলী এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। সত্যতা যাচাইয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েই অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মামুন আলীকে হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে নগরের পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী টোল রোড এলাকার এ্যাংকোরেজ ডিপোর উত্তর পাশের ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় পুলিশের সামনেই ‘ক্যাডার বাহিনীর’ সদস্যরা শোডাউন করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করে বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তার কিং আলী হালিশহর থানার গলিচিপা পাড়ার হাজী আশরাফ আলীর ছেলে। তিনি নগর বিএনপির সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার কিং আলী এবং তার ভাই লোকমান আলীর বিরুদ্ধে দখলচেষ্টা, মালামাল লুট, ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মোহাম্মদ ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার আরিফ মঈনুদ্দীন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে আতাহার ইশরাক সাবাব নামে একজনের কাছ থেকে চুক্তিপত্র অনুযায়ী জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছে মোহাম্মদ ট্রেডিং। মূলত তাদের পাথরের ব্যবসা। গত ১৬ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কিং আলীর ভাই লোকমান আলী তাদের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে উচ্ছেদ এবং মালামাল লুটের হুমকি দেয়। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি নেতা কিং আলীর নেতৃত্বে অন্তত ২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে। এরপর গালাগালি এবং একপর্যায়ে মারধর শুরু করে কর্মচারীদের। এতে কয়েকজন আহত হন।
মারধরের কারণ জানতে চাইলে আসামিরা প্রতিষ্ঠানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গাড়ি, পে-লোডার স্ক্যাভেটর, ট্রাক, পানির পাম্পসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে। এরপর মামুন আলী প্রকাশ কিং আলী প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে ঢুকে নগদ ৩০ লাখ টাকা নিয়ে নেয় এবং প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে আরও এক কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে হুমকি দেয়। পরে তারা ১০ থেকে ১৫টি ট্রাক নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এদিকে, গ্রেপ্তারের পরপরই ‘কিং আলী’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া স্ট্যাটাসে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে লেখা হয়, ‘তুই আপা (হাসিনা) নামে মামলা করলি কেন? সরকার পতন আন্দোলনে এত সাহস ও টাকা কয় পাইলী? বাঁচতে চাইলে ৫০ লক্ষ দে!’
গ্রেফতারের বিষয়টি জানার জন্য পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘মোহাম্মদ ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট এবং চাঁদা দাবির অভিযোগে দুইজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় এবং মূল অভিযুক্ত মামুন আলী প্রকাশ কিং আলী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে টাকা দাবির বিষয়টি ‘ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিং আলী গ্রেপ্তার এড়াতে অন্তত দেড়শ ছেলে নিয়ে আসে ঘটনাস্থলে। সে তখন শোডাউন দেওয়ায়। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।’ পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার।