রাউজানে ছাত্রদলের দুই নেতাকে অপহরণপূর্বক মারধর

চট্টগ্রামের রাউজানে উপজেলা ছাত্রদলের দুই নেতাকে অপহরণ করে মারধরের অভিযোগ ওঠেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। হাত, পা, মুখ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ওই দুই ছাত্রনেতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

অপহরণের শিকার দুজন হলেন, রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সোহেল এবং নোয়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। তারা দুজনেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার গ্রুপের সমর্থক বলে জানা গেছে।

হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘অপহরণ নয়, দলীয় গ্রুপিংয়ের ফলে মারধর করা হয়েছে দুই ছাত্রদল নেতাকে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে দুজনই আশঙ্কামুক্ত।’

স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, রাউজানজুড়ে দীর্ঘ ১৫ বছর সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। সম্প্রতি জনরোষে আওয়ামী সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১০টি মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এরই মধ্যে রাউজানজুড়ে বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আধিপত্য নিয়ে অন্তঃকোন্দলও বেড়েছে। মূলত সেখানে গোলাম আকবর খন্দকার এবং গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রুপের মধ্যে স্নায়ুদ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

থানার ওসি মীর মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘মূলত ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খন্দকার গ্রুপ এবং গিয়াস উদ্দিন কাদের গ্রুপের মধ্যে। যাদেরকে মারধর করা হয়েছে তারা গোলাম আকবর খন্দকরের সমর্থক। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করতে থানায় আসেনি। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

অপহরণ এবং মারধরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জয়নাল আবেদীন সোহেল সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক একটি বিচার নিয়ে আজ সকাল ১১টার দিকে আমি নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাই। এরই মধ্যে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থিত ১০-১৫ জন ছেলে অস্ত্র-শস্ত্রসহ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি খন্দকার গ্রুপ করি কেন? আমি যেন তাদের সাথে যোগ দিই। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে বলে গুলি করে দেবে। আমি বললাম, গুলি করে দে। তারা আমার ওপর হামলা চালিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এরপর আমাদের সাড়ে ১১টার দিকে চৌধুরী ঘাটে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ঘাটে নিয়ে গিয়াস উদ্দিন কাদের, তার ছেলে হুম্মাম এবং দুবাইয়ের মাফিয়া ডন জসিমের সাথে ওরা ফোনে কথা বলে। ফোনের ওপার থেকে আমাদের গুলি করার নির্দেশ আসে। এদিকে, আমাদের গ্রুপের লোকজন আমাদের খোঁজা শুরু করে দেয়। তখন তারা আমাদের চোখ, মুখ, হাত-পা বেঁধে একটি নৌকায় তুলে দেয় মাঝিসহ। ওই মাঝি আমাদের একটি চরে নিয়ে ফেলে রাখে। এরপর আমাদের কখন উদ্ধার করা হয়েছে তাও জানি না। আমার সাথে তাদের কোনো পূর্বশত্রুতা ছিল না। আমি এ ঘটনায় অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেব।’

‘আমার অপরাধ আমি কেন গোলাম আকবর খন্দকারের রাজনীতি করি। এজন্যই আমার ওপর এবং সাজ্জাদ হোসেনের ওপর তারা হামলা চালায়। আমি ছাত্র আন্দোলনেও ছিলাম। আর ওরা ছিল দেশের বাইরে। এখন ওরা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এমনকি সরকার পতনের পর ফজলে করিম ওরফে জুইন্না রাজাকারকে গিয়াস কাদের তার বাসায় রেখেছিল।’-যোগ করেন জয়নাল আবেদীন সোহেল।

সোহেলের বাবা শওকত সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমার ছেলে এবং তার বন্ধুর ওপর আজ হামলা হয়েছে ইউপি কার্যালয়ের সামনে। সেখান থেকে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের আনুমানিক ৩০ জনের গ্রুপ তাদের ধরে নিয়ে যায়। দুজনই এখন মেডিকেল আছে।’

সরকার পতনের পর থেকে রাউজানে এখন গিয়াস উদ্দিন কাদেরের লোকজন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানি, মারধর এবং নির্যাতন চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক