নিজস্ব প্রতিবেদক।
বহুল আলোচিত ও ভাইরাল ওসি মোহাম্মদ মহসীনের বদলি হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেঁজগাও থানা থেকে তাঁকে সুনামগঞ্জের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়েছে।
মহসীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে একটানা ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন। বাকলিয়া, বায়েজিদ, কোতোয়ালী, ডবলমুরিং থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সবশেষ তিনি কোতোয়ালী থানা থেকে চুয়াডাঙ্গায় বদলি হয়ে ট্রেনিং ছুটিতে যান। এরপর ফের তাঁকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনকালীন ‘জনবান্ধব পুলিশিং’, ‘হ্যালো ওসি’সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব উপস্থিতি ছিলো তাঁর।
তবে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা ও নেহায়েত কম নয়।
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানাতে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের পতিতালয়গুলো থেকে কথিত সোর্স দিয়ে মাসোহারা নিতেন ওসি মহসিন, একই কাজ তিনি নগরীর লালদীঘির পাড়ে অবস্থিত পতিতালয়, ড্রিঙ্কস বার গুলো থেকেও করতেন। তার এসআই আসামি ধরে আনলে টাকার বিনিময়ে ওসি মহসিন এর সাথে মীমাংসা করতে পারলে আসামীর বিরুদ্ধে আর মামলা না করে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হতো। পক্ষান্তরে নিরপরাধ ব্যক্তি ওসি মহসিনকে ঘুষ দিয়ে খুশি করতে না পারলে তাকে মিথ্যা মামলায় চালান দেওয়া হতো।
জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দাঙ্গা হাঙ্গামা ঘনিয়ে আসলে বিরোধীদলীয় লোকদের বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতের লোকদের থানায় ধরে এনে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ঘুষ নিয়ে পরে ছেড়ে দিতেন ওসি মহসিন। অভিযোগ রয়েছে নগরীর ছাত্রদল এবং যুবদল কর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর হয়রানি করিয়েছেন। ঘুষ দিতে না পারলে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দিতেন রাজনীতি না করা সাধারণ মানুষকেও।
গ্রেফতার বাণিজ্য ঘুষ দুর্নীতি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেও ‘উপরের ছায়া’ তৎকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সব কথার কারণে আর গোপালগঞ্জ বাড়ি হওয়ার কারণে ওসি মহসিন এর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতনা।
নিজের শক্তিমত্তার জানান দিতে কখনো কখনো ফেসবুকে তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নওফেলসহ বিভিন্ন মন্ত্রীদের সাথে ছবি ফেসবুকে আপলোড করতেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ওসি মোহাম্মদ মহসীনের নিজের নামে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জে ১৫টি প্লট, ৯০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ প্রায় ১২ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তার স্ত্রী এবং সন্তানের নামেও প্লট ও ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
এ ব্যাপারে দুদকের কর্মকর্তার কাছে মামলা না করার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে তিনি বলেন ওসি মহসিন এর বাড়ি গোপালগঞ্জ ‘উপরের চাপ’এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রীর সাথে তার গভীর সখ্যতার কারণে তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেননি।