কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন, পুলিশের বাধা

ওয়াসিম জাফর।

Cvoice24.com
প্রচ্ছদচট্টগ্রাম (মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ)
কোটা বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ নগরে, পুলিশের বাধা উপেক্ষা
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ৬ জুলাই ২০২৪
কোটা বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ নগরে, পুলিশের বাধা উপেক্ষা
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কোটা সংস্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। এদিকে, পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে কাজ হয়নি। দাবি না মানলে আন্দোলন জোরালো করার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন তারা।

শনিবার (৬ জুলাই) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা ভেঙেই ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গিয়ে নগরের দুই নম্বর গেইটের গোলচত্ত্বরে অবস্থান নিয়েছেন।

nagad
nagad

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটলে করে শিক্ষার্থীরা ষোলশহর নামেন। সেখান থেকেই কোটা সংস্কারের দাবি তুলে তারা বিভিন্নরকম স্লোগান দিতে দিতে সড়কের নেমে আসে। পুলিশ একপর্যায়ে তাদেরকে স্টেশন থেকে সড়কে নামতে না দিলে তারা পুলিশের বাধা ভেঙে সড়কে নেমে আসেন।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সড়কে এক পাশের যান চলাচল। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যান চলাচল ব্যহত হওয়ায় বাড়ছে যানজটও। তবে, যেকোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানও দেখা গেছে।

আলাপ কালে চট্টগ্রামের কণ্ঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার ফলে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেধা থাকার পরও যোগ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মূলত আমরা সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা প্রত্যাহার করা জন্য এই আন্দোলন করে যাচ্ছি।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।

ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক