চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে “মাই ম্যান”

নিজস্ব প্রতিবেদক।
প্রকাশকাল ১৬ মার্চ ২০২৪।

স্বেচ্ছাসেবক লীগে ‘আমার মানুষ’
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা হয়েছে একরাতে। একমাস আগে সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষর করা ওই কমিটি ঘোষণা হয়েছে বুধবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাতে। কোনো ‘টু শব্দ’ ছাড়া মধ্যরাতে নাজিল হওয়া ওই কমিটি নিয়ে চলছে বিতর্ক।

অভিযোগ ওঠেছে, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, অস্ত্র কারবারি ও যুবদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিকজনকে এসব কমিটিতে নেতা বানানো হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন নগর কমিটির ১২ নেতাও। প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

তবে কমিটি নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ। তার দাবি, ‘কমিটি গঠনের আগে নাছির বলয়ের অনুসারিদের নামের তালিকা চাওয়ার পরেও তারা দেয়নি। আর কমিটি অনেক আগে স্বাক্ষরিত হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির মা মারা যাওয়ার কারণে কমিটি ঘোষণা বিলম্ব হয়েছে।’

এর আগে, গত বুধবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশিষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ তাদের নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে কমিটির তালিকাগুলো প্রকাশ করেন। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসারে থানা পর্যায়ে ৭১ সদস্য ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঘোষিত কমিটিগুলোতে কিছু পদ খালি রাখা হয়েছে। আগামী তিন বছরের জন্য ঘোষিত হয়েছে এসব কমিটি।

থানার মধ্যে ঘোষণা করা হয়—চান্দগাঁও, চকবাজার, পতেঙ্গা, সদরঘাট, বন্দর, পাহাড়তলী ও আকবরশাহ থানা কমিটি।

অন্যদিকে ১২টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে বাগমনিরাম ওয়ার্ড, চকবাজার, উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা, পশ্চিম মাদারবাড়ি, পূর্ব মাদারবাড়ি, গোসাইলডাঙ্গা, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর , দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, উত্তর পাহাড়তলী ও উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়।

‘বিতর্কিত’ কমিটির প্রতিবাদ

চট্টগ্রামের নগর রাজনীতি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে একাংশ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলয় এবং অপর অংশ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলয়। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজস্ব কোনো বলয় নেই বলে বারবার দাবি করে আসছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহিউদ্দিনপুত্র নওফেল।

রাতের আঁধারে ঘোষিত ৭ থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিকে বিতর্কিত দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আ জ ম নাছির ঘরনার ১২ সদস্য। বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতা ১২ সদস্যের মধ্যে সাতজন সহ সভাপতি, তিনজন যুগ্ম সম্পাদক এবং বাকি দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক।

তাদের দাবি, কোনোপ্রকার সমন্বয় ছাড়াই হঠাৎ ঘোষণা করা হয়েছে এই ‘মাইম্যান’ বা ‘আমার মানুষ’ কমিটি। আর কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে নাছির অনুসারিদের নাম।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের ঘোষিত কমিটি অবৈধ এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমরা চট্টগ্রাম মহানগর কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করেছি, গতকাল রাত (১৩ মার্চ) আনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিটে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে প্রচারিত কমিটি ভাইরাল করা হয়েছে। আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় কর্মীদের জানাচ্ছি উক্ত প্রচারিত কমিটির সাথে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ন্যুনতম সম্পর্ক নেই। আমরা কোন অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত কমিটি গঠনই আমাদের লক্ষ্য। যা অচিরেই প্রকাশিত হবে।’

এ প্রসঙ্গে নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যখন কোনো কর্মীকে নেতা বানানো হবে তখন নিয়ম অনুযায়ী বায়োডাটা নেওয়া হয়। এরপর সেগুলোকে যাচাই বাছাই করা হয়। এরপর উপ-কমিটি করার সুযোগ থাকলে করা হবে। আর সম্প্রতি ঘোষণা করা কমিটি গঠনের আগে উচিত ছিল আমাদের নগর কমিটির ২০ জনকে নিয়ে বায়োডাটাসহ বসার। এরপর পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করে তাদের পদ পদবী দেওয়ার বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। তারা এসব কোনোকিছু যাচাই করেনি। আমাদের সাথে সমন্বয়ও করেনি। উল্টো রাতের আঁধারে কমিটি দিয়েছে।’

‘তাও ভাল কথা, কিন্তু স্বাক্ষর জানুয়ারির ৩১ তারিখের। আমাদের সংগঠন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এই সংগঠনের কমিটি রাতের আঁধারে লুকিয়ে দেওয়ার কি আছে? আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এই কমিটি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতারাও কিছু জানেন না।’-যোগ করেন তিনি।

হেলাল বলেন, ‘মহিলা দলের নেত্রীর ছেলে কমিটিতে এসেছে। ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ছেলেও কমিটিতে এসেছে। নগর কমিটির সভাপতির শালাকে পাহাড়তলী থানার কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও মামলা আছে।’

‘আমরা আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাইয়ের সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করি, কোনপ্রকার কুকর্মে জড়িত থাকি না, সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে রাজনীতি করি সেটাই আমাদের অপরাধ। যারা অপকর্ম করে বেড়ায় তাদের হোতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অপকর্মকারীদের একটা আইডেন্টিটি দেওয়া হয়েছে এই কমিটির মাধ্যমে। মাইম্যান কমিটি দিলেও সে কমিটির একটা সৌন্দর্য থাকে। সেখানে পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে করে।’ – বলেন হেলাল।

অস্ত্র কারবারি থেকে চাঁদাবাজ—বাদ পড়েনি কেউই:

ঘোষিত কমিটির চান্দগাঁও থানার সভাপতি করা হয়েছে মঈন উদিন ফরহাদকে। অবৈধ অস্ত্রসহ র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে জাবেদুল ইসলাম জাবেদকে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ।

ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার মাদক কারবারিও কমিটিতে:

গত বছরের ২৩ জুলাই ৩৯ কেজি গাঁজাসহ নগরের হালিশহর থানা এলাকা থেকে মো. সোহেলকে (২৯) আটক করে র‍্যাব-৭। তিনি পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা চরবস্তি এলাকার মৃত. মো. ইদ্রিসের ছেলে। তখন পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গাঁজাসহ আটকের পরপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনদিনের মাথায় ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।

কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে মাদক কারবার করা ওই যুবককেও আনা হয়েছে ওয়ার্ড কমিটিতে। তাকে দক্ষিণ পতেঙ্গা ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে।

শুধু সোহেল নন, উত্তর পতেঙ্গা ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে সাহাবুদ্দিন শাবুকে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। পারিবারিক সূত্রে বিএনপি সমর্থক হলেও আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কাউন্সিলর আবদুল বারেকের ‘ছোঁয়ায়’ তিনি বনে গেছেন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. সাহাবুদ্দিন প্রকাশ সাবু পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। তিনি উত্তর পতেঙ্গার ধুমপাড়া এলাকার আব্দুর রশীদ চেরাংয়ের বাড়ির মৃত শের আলীর ছেলে। তাকে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ মাদকসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সময় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলাও হয়।

স্থানীয় এক ছাত্রলীগের নেতা বলেন, ‘ছোট থেকে দেখে আসছি সাবুর পুরো পরিবার বিএনপি করে। ওদের ওই পাড়াটাই বিএনপি অধ্যুষিত। যেই ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল বারেক কোম্পানি কাউন্সিলর হলেন, সেই থেকে সাবু পুরো আওয়ামী লীগার হয়ে গেলেন। তার দাম্ভিকতায় মূল লীগাররা এখন কোণঠাসা। এখন দেখি তিনি পদও পাচ্ছেন। আসলে এসব বিষয় খুবই হাস্যকর। দলের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা তরুণরা চিন্তিত।’

এদিকে, ৪১ নং ওয়ার্ডের মোজাহেরুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধেও যুবদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে অভিযোগ ওঠেছে।

পতেঙ্গার ‘চাঁদাবাজ মাসুদ’ নেতা হলেন:

নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো হয়েছিল গাছ ও বাগান। সেই সৌন্দর্য নষ্ট করে অবৈধ দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করা মাসুদ করিম পতেঙ্গা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি।

তিনি পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা ফুলছড়ি পাড়া এলাকার বশর বলির বাড়ির নূর মোহাম্মদের ছেলে।

অভিযোগ আছে, প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে ভুঁইফোড় ‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হকার ক্যামেরাম্যান শ্রমজীবী সমবায় লিমিটেড’ সমিতির ব্যানারে দৈনিক দোকান ভেদে ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকা তোলেন এই মাসুদ। তার অধীনে রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। নিজেকে ওই সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসুদের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় ২০১৫ সালের একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে দোকান বাণিজ্যের পাশাপাশি তিনি টানেল রোডে ওই সমিতির ব্যানারে বানিয়েছেন মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। যেখান থেকে দৈনিক মাইক্রোবাস প্রতি ১শ’ টাকা চাঁদা তোলা হয়। প্রতিদিন সেখানে অন্তত ৫০টি মাইক্রোবাস টানেলে যাত্রী আনা নেওয়া করে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

বিএনপি নেত্রীর ছেলেও কমিটিতে

এদিকে, ‘গোপনে’ ঘোষণা করা এই ‘বিতর্কিত’ কমিটিতে ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মোহাম্মদ জুয়েলকে। তার মা বিএনপির সক্রিয় নেতা সেলিনা বেগম।

অভিযোগ ওঠেছে—‘টাকা খেয়ে’ বিএনপি নেত্রীর ছেলে জুয়েলকে দেওয়া হয়েছে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ এই পদ। ইতোমধ্যে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

বাগমনিরাম ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সেই ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করে বড় হয়েছি। অথচ, আমাদের বাদ দিয়ে রাতের আঁধারে পকেট কমিটি করা হচ্ছে। আবার সেই কমিটিতে স্থান পাচ্ছে জামায়াত-বিএনপির দোসরেরা। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় এমন কমিটি লজ্জার।’

বিতর্কের বিষয় অস্বীকার :

থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘যে ছেলেগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছে তারা তো তাদের একটা পরিচয় চায়। সেই পরিচয় দিতেই সম্মেলন করে আমরা কমিটি গঠন করেছি। আর কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষরও আছে। তাদের (নাছির বলয়) যদি চাওয়া-পাওয়া থাকে তারা নামের তালিকা দিলে তো আমাদের সমস্যা ছিলো না। এখন তারা ১২ জন আছে নগর কমিটিতে, থানা আছে ১৫টি; সব থানায় তারা তাদের লোক গুরুত্বপূর্ণ পদে চাইলে হবে না।’

নাছির বলয়ের অনুসারীদের সাথে সমন্বয় করা হয়নি- এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের সাথে সমন্বয় করতে গেলে তো কমিটিই করা হতো না। ওরা যদি আমাদের বলে তাদের যোগ্য কয়েকজন নেতাকর্মী আছে তাদের নাম দেন তাইলে তো আমরা অবশ্যই দেবো। কারণ তারাও আমাদের ভাই। কিন্তু তারা ঢালাওভাবে পুরো ৪১টি ওয়ার্ডে তাদের পছন্দের মানুষ চাইলে তো হবে না। তারা আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও আসে না। আসলেও আলাদা আসে। তবে তাদের সাথে সমন্বয় কিভাবে করব? যিনি ওই গ্রুপের (নাছির বলয়) প্রধান তিনিই ১৫টি থানার সম্মেলনের মধ্যে ১৪টিতেই ছিলেন না। একটিতে বোধহয় ছিলেন।’

কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু পেরেছি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, থানা আওয়ামী লীগ এবং কাউন্সিলরদের তদবির অনুযায়ী নেতাকর্মীদের পদবি দিয়েছি। নামগুলো তারাই প্রস্তাব করেছে।’

সেক্ষেত্রে যাচাইয়ের দায়িত্ব তো আপনাদের ছিল। করা হয়েছিল কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আসলে দীর্ঘদিন পর কমিটি হয়েছে। একটু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। যে অভিযোগগুলো যাদের নামে এসেছে আমরা যাচাই করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। কয়েকজনের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি।’

ধারাবাহিকভাবে বাকি ৮টি থানা এবং ৩১টি ওয়ার্ডেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

থানা কমিটির নেতৃত্বে যারা :

ঘোষিত কমিটিতে সদরঘাট থানার সভাপতি করা হয়েছে তোফায়েল আহমেদ রয়েলকে ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হয় ফয়সাল অভিকে। বন্দর থানার সভাপতি করা হয় মো. ফয়সাল হোসেনকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় অমিত পালিত অংকুরকে। পাহাড়তলি থানার সভাপতি করা হয় মো. আবু রাশেদকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় সুজন সর্ববিদ্যাকে।

এছাড়া আকবরশাহ থানার সভাপতি করা হয় মো. আরমগীর মাহমুদ ফেরদৌসকে ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. সোহেলকে।

ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্বে যারা

৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের সভাপতি রিমান মুসলিম ও সাধারণ সম্পাদক শুভ দত্ত। ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সভাপতি শেখ মনছুর আহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল। ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সভাপতি মিঠুন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রাজু।

এদিকে, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সভাপতি মো. নুরুল আনোয়ার রিমন, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত শীল। ৪১ নম্বর দক্ষিন পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সভাপতি মো.আমির হামজা ও সাধারণ সম্পাদক সাজিউল করিম (সাজিব)। ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদাড়বাড়ি ওয়ার্ডের সভাপতি মো. আসিফ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম। ৩০ নম্বর পূর্ব মাদাড়বাড়ি ওয়ার্ডের সভাপতি সাইদুল ইসলাম পারেল, সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হিরা।

এছাড়া, ৩৮ নম্বর দক্ষিন মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের সভাপতি মো.রাশেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন বাদশা। ১১ নম্বর দক্ষিন কাট্টলি ওয়ার্ডের সভাপতি মাজহারুল আমীন চৌধুরী জামশেদ, সাধারণ সম্পাদক জনি শীল শিবু। ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের সভাপতি মামুন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক শাওন মুরাদ আলী জাবেদ। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সভাপতি মোশারফ হোসেন ছোটন, সাধারণ সম্পাদক মো.রুবেল। ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের সভাপতি তাজবিনুদ্দিন জীবন, সাধারণ সম্পাদক তুষার আহমেদ।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০ সদস্যের নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আটজন হচ্ছেন নওফেল আর বাকি ১২ জন নাছির অনুসারী। এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হলেও দুই বছর পরও তা করতে পারেনি দেবু-আজিজের এই কমিটি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক