নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৫ সংসদীয় আসনে ৯৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে নগরী ও জেলার উপজেলাগুলোতে টহল শুরু করেছে বিজিবি। এর মধ্যে বিজিবি চট্টগ্রাম–৮ ব্যাটালিয়নের অধীনে ১১টি সংসদীয় আসনে ৭৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে নগরীর হালিশহরে ব্যাটালিয়ন থেকে বিজিবি সদস্যরা বিভিন্ন উপজেলার উদ্দেশে রওনা দেন। বাকি চার আসনে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের আরও ২২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে তারা আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। বিজিবির পাশাপাশি চট্টগ্রামের এই ১৫ নির্বাচনী এলাকায় নেমেছে র্যাবের ৩২টি টহল টিম এবং একটি করে গোয়েন্দা টিম। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে নামছে সেনাবাহিনীও।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান আজাদীকে বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৫ আসনে (সন্দ্বীপ ছাড়া) শুক্রবার থেকে ৯৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল থেকে নগরী ও জেলায় বিজিবি সদস্যরা মাঠে নেমেছেন এবং টহল শুরু করেছেন। বিজিবি ছাড়াও এই ১৫টি সংসদীয় এলাকায় গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার থেকে র্যাবের ৩২টি টহল টিম এবং সাথে একটি করে গোয়েন্দা টিমও মাঠে নেমেছে। তারা নির্বাচনী এলাকাগুলোতে টহল দিচ্ছে। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে মাঠে নামবে সেনাবাহিনীও। সন্দ্বীপে দায়িত্ব পালন করবে কোস্ট গার্ড। স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশের নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীসহ সারাদেশে এক হাজার ১৫১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
র্যাব–৭, চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম আজাদীকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের নগরী ও জেলার ১৬টি আসনে র্যাবের দুইটি করে টহল টিম এবং একটি করে গোয়েন্দা টিম শুক্রবার থেকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। যেন নির্বাচনের আগে কিংবা নির্বাচন পরবর্তী যেকোনো ধরনের সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, দায়িত্বপালনকারী টিমগুলোর সাথে নির্বাচনের দিন বাড়তি কিছু ফোর্স যুক্ত করা হবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫–১৭ জন নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অািফসার ও চট্টগ্রামের নির্বাচন কর্মকর্তারা। এছাড়াও স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কমিশনের ভেটিং (পরীক্ষা–নিরীক্ষা) শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করে।
পরিপত্রে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা–মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ও পার্বত্য এবং দুর্গম এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রের সর্বোচ্চ ১৫–১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৬–১৭ জন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।
দুর্গম এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, কঙবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলা, মহালছড়ি উপজেলা, মাটিরাঙা, রামগড় উপজেলা, গুইমারা ইপজেলা, লক্ষ্মীছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালা উপজেলা, রাঙামাটি জেলার নানিয়াচর উপজেলা, বরকল উপজেলা, বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি সদর, রাজস্থলী, লংগদু, কাউখালী, কাপ্তাই, জারাইছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা, বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলা, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রামু ও লামা উপজেলা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম–৩ সন্দ্বীপ আসনের সারিকাইত ইউনিয়ন, আজিমপুর ইউনিয়ন, রহমতপুর ইউনিয়ন, মাইটভাঙা ইউনিয়ন ও কালাপানিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবে কোস্টগার্ড। এছাড়াও কঙবাজার–২ আসনের কুতুবদিয়া, বড়ঘোনা, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, কৈয়ারবিল, আলি আকবর ডেইল, লেমসিখালী উপজেলা এবং কঙবাজার–৪ আসনের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী র্যাব ফোর্সেস ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সব নির্বাচনি এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনি এলাকায় সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা দেবে। এছাড়াও ভোটকেন্দ্র ও ভোট গণনার ক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি আসনে কমপক্ষে দুটি টহল দল মোতায়েন ও প্রতিটি ব্যাটালিয়নে দুটি টহল স্ট্রাইকিং রিজার্ভ থাকবে।
র্যাব সদর দপ্তরে ১৫টি টহল দল সেন্ট্রাল রিজার্ভ হিসেবে প্রস্তুত থাকবে। দেশব্যাপী ২৫টি অস্থায়ী র্যাব ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এছাড়াও অন্যান্য স্থানে মোতায়েনের জন্য ৫০টি টহল দল প্রস্তুতসহ দেশব্যাপী সর্বমোট ৭০০টির অধিক টহল দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং নিজস্ব সুইপিং ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম প্রস্তুত থাকবে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হবে। অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ/গুরুত্বপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন থেকে টহল দল গুরুত্বপূর্ণ/ঝুঁকিপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। বিশেষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের স্পেশাল ফোর্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ৭টি জোনে বিভক্ত হয়ে মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। র্যাব ডগ স্কোয়াডের ১০টি দল র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এছাড়াও দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশির মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও গোয়েন্দা সূত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আসনগুলোতে অধিক টহল নিয়োজিত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। ৬ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় ট্যাঙি, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারবে না। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করতে পারবেন না কেউ। কেবল জরুরি প্রয়োজনীয় বাহন ও ইসির অনুমতিপ্রাপ্ত যান চলাচল করতে পারবে। ভোটগ্রহণের আগের ৪৮ ঘণ্টা ও পরের ৪৮ ঘণ্টা মিছিল–মিটিং ও শোভাযাত্রা করা যাবে না।