চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কানেক্টিং রোড উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত প্রকল্পের ৭ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৩৪৭ টাকার ক্ষতিসাধন ও জাল–জালিয়াতির মাধ্যমে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়েছে। এতে চসিকের সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও ব্যাংক এশিয়া কুমিল্লা শাখার এভিপি এবং শাখা প্রধান মো. তোফায়েলকে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত বাকী দুই আসামি হলেন এজাহারে থাকা কুমিল্লার ঝাউতলার বাসিন্দা ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন ও ইউসিবিএল কুমিল্লা শাখার সাবেক এফভিপি অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ এবং বর্তমানে উক্ত ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের স্পেশাল অ্যাসেটস ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের কর্মকর্তা মো. সরোয়ার আলম। এরমধ্যে চসিকের সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন উচ্চ আদালতের নির্দেশে গতকাল ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। আদালত মামলার নথি তলব করেছেন এবং আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ১৪ আগস্ট দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সিরাজুল হক চট্টগ্রাম আদালতে থাকা দুদকের প্রসিকিউশন শাখায় পৃথক এ দুটি চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ২১ আগস্ট উক্ত চার্জশিট গ্রহণ বিষয়ে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত চার্জশিটটি গ্রহণ না করে পুনঃতদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে আদালতসূত্র জানায়, এজাহার এবং দাখিলকৃত চার্জশিটে আমমোক্তারনামার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমমোক্তারনামার কাগজপত্র চার্জশিটের সাথে জমা দেওয়া হয়নি। অথচ এই আমমোক্তারনামা অভিযোগ বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালত বলেছেন, আমমোক্তারনামা সংগ্রহ করুন। ত্রুটিবিচ্যুতি থাকায় আদালত দুদকের দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করেননি বলেও আদালতসূত্র জানিয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দাখিল করা চার্জশিটে দেখা যায়, চার্জশিট থেকে বাদ পড়েছে এজাহারভুক্ত ছয়জন। তারা হলেন, ফেনী সদরের বাসিন্দা ও এস এ ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক ছালেহ আহম্মদ, ঢাকার পশ্চিম পান্থপথের মেসার্স রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলম, কুমিল্লা শাখার তৎকালীন অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার এবং বর্তমানে এভিপি পদে কর্মরত মো. আনিসুজ্জামান, সাবেক এভিপি অ্যান্ড ক্রেডিট ইনচার্জ এবং বর্তমানে কুমিল্লার ঝাউতলা শাখার এফএভিপি ও শাখা প্রধান ছাইফুল আলম মজুমদার, সাবেক ইও অ্যান্ড রিলেশনশিপ অফিসার এবং বর্তমানে নগরীর খুলশী শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মকামে মাহমুদুল ইসলাম আরেফিন এবং সাবেক ইও অ্যান্ড রিলেশনশিপ অফিসার এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম রিজিওনাল অপারেশন সেন্টারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার দেবু বোস। ২০২২ সালের ১০ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বাদী হয়ে ইউসিবিএলের ৫ কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দাখিল করেন। এজাহারভুক্ত এ আট আসামি হলেন কুমিল্লার ঝাউতলার বাসিন্দা ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন, ফেনী সদরের বাসিন্দা ও এস এ ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক ছালেহ আহাম্মদ, ঢাকার পশ্চিম পান্থপথের মেসার্স রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলম, ইউসিবিএল কুমিল্লা শাখার সাবেক এফভিপি অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ এবং বর্তমানে উক্ত ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের স্পেশাল অ্যাসেটস ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের মো. সরোয়ার আলম, কুমিল্লা শাখার তৎকালীন অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার এবং বর্তমানে এভিপি পদে কর্মরত মো. আনিসুজ্জামান, সাবেক এভিপি অ্যান্ড ক্রেডিট ইনচার্জ এবং বর্তমানে কুমিল্লার ঝাউতলা শাখার এফএভিপি ও শাখা প্রধান ছাইফু আলম মজুমদার, সাবেক ইও অ্যান্ড রিলেশনশিপ অফিসার এবং বর্তমানে নগরীর খুলশী শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মকামে মাহমুদুল ইসলাম আরেফিন এবং সাবেক ইও অ্যান্ড রিলেশনশিপ অফিসার এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম রিজিওনাল অপারেশন সেন্টারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার দেবু বোস।
এ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পরস্পর যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হওয়ার ও অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পোর্ট কানেক্টিং রোডের অলংকার থেকে নিমতলা পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষতিসাধন করেছেন আসামিরা। প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়ার পর নিজে কাজ না করে, অবৈধভাবে আমমোক্তার নিয়োগ করে কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব অপরকে প্রদান করা হয়। এছাড়া কাজটি শেষ না করে গণভোগান্তি সৃষ্টি করা হয়। এর মাধ্যমে সরকারি ৭ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৩৪৭ টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়। এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামি মো. জাকির হোসেন চসিকের উক্ত প্রকল্পের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার মোহাম্মদ আলম কর্তৃক অবৈধভাবে আমমোক্তার নিযুক্ত হন। তিনি মিথ্যাভাবে নিজেকে রানা বিল্ডার্স অ্যান্ড সালেহ আহম্মেদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং সে অনুযায়ী স্বাক্ষর প্রদান করে ইউসিবিএল কুমিল্লা শাখার সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। আসামি মো. জাকির হোসেন রানা বিল্ডার্স অ্যান্ড সালেহ আহম্মেদ নামে হিসাব নম্বর খুলেন এবং মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ নামে লোন হিসাব নম্বর খুলে ঋণ গ্রহণ করে তা উত্তোলন করেন। তার এই কাজে ব্যাংক কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, সরকারি টাকার ক্ষতিসাধন ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন আসামিরা।
জানতে চাইলে জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী চট্রলার কন্ঠকে বলেন, সাইফুদ্দিন জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন। উচ্চ আদালত তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করলে বিচারক ২৯ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য রাখেন। সেদিন তার জামিন বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।