logo
Search
Menu
প্রচ্ছদ
আজকের পত্রিকা
অস্তিত্বের হুমকি তৈরি হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে পাকিস্তান
রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন খাজা মুহাম্মদ। পাকিস্তানে প্রতিবেশী ভারতের সামরিক আক্রমণ আসন্ন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তিনি।
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
প্রকাশ : বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫২
মুদ্রিত সংস্করণ
Copy link
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ|সংগৃহীত
সীমান্তে পঞ্চম দিনের মতো গোলাগুলি
ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত পাকিস্তানের
মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির সাথে আজ মোদির বৈঠক
গত সপ্তাহে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশের হামলার আশঙ্কায় নিজেদের সামরিক বাহিনী প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ।
পাকিস্তান উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়ে খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন, আমাদের অস্তিত্বের জন্য প্রত্যক্ষ কোনো হুমকি তৈরি হলেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার ব্যবহার করা হবে। গত সোমবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে নিজের কার্যালয়ে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন খাজা মুহাম্মদ। কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী বন্দুক হামলার পর পাকিস্তানে প্রতিবেশী ভারতের সামরিক আক্রমণ আসন্ন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার কাশ্মিরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে। এই হামলার ঘটনার পর হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে। পাশাপাশি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। কাশ্মিরে দশকের পর দশক ধরে স্বাধীনতাকামীদের পাকিস্তান সমর্থন দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। হিমালয় অঞ্চল লাগোয়া এই ভূখণ্ড নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দু’টি অতীতে দুইবার যুদ্ধ করেছে।
সোমবার ইসলামাবাদে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন, ‘আমরা আমাদের বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করেছি। কারণ এখন সামরিক আক্রমণ আসন্ন। সুতরাং এই ধরনের পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা সেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, কাশ্মিরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের হুমকি-ধামকি বাড়ছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতীয় হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করেছে। ভারতের এই আক্রমণ আসন্ন বলে মন্তব্য করলেও এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেননি তিনি।
সীমান্তে ফের গোলাগুলি : ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর অনুসারে, কাশ্মির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে টানা পাঁচ রাত ধরে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।
অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলির বিষয়ে বরাবরের মতো পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশটির সংবাদমাধ্যমে এখনো এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এনডিটিভির খবরে দাবি করা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মিরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর পঞ্চম রাতের মতো যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তানি সেনারা। গতকাল সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই উসকানির জবাব তারা ‘সংযত ও কার্যকর’ভাবে দিয়েছে।
ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত : পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবর অনুসারে, কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। ড্রোনটি আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে ড্রোনটি ভূপাতিত করে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার ভেতরেই আজাদ কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি)-তে ভারতের একটি নজরদারি ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, এমনটাই জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা : এ দিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, জম্মু-কাশ্মির রাজ্যজুড়ে ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী’ অভিযানের সুবিধার্থে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাশ্মিরে অর্ধেকেরও বেশি পর্যটনকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে মোট ৮৭টি পর্যটন স্পট রয়েছে। সে সবের মধ্যে ইউসমার্গ, তাওসি ময়দান, দুধপাথরি, আহরবাল, কাউসারনাগ, বাঙ্গুস, চান্দিগাম, উলার, রামপোরাসহ মোট ৪৮টি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গুলমার্গ, সোনমার্গ, ডাল লেকসহ অন্যান্য যে ৪০টি পর্যটনকেন্দ্র এখনো খোলা রয়েছে, সেগুলোতেও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পানির ন্যায্য হিস্যা : পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এআরোয়াই নিউজের খবর অনুসারে, সিন্ধু পানিচুক্তির অধীনে পাকিস্তানের প্রাপ্য পানি সুরক্ষায় দেশটি প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বলে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন। ভারতের একতরফাভাবে এই চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের পর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইসহাক দার। তিনি বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত শুধু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কের নীতিমালা ও স্বাক্ষরিত চুক্তির সরাসরি পরিপন্থী। তিনি আরো বলেন, সিন্ধু পানিচুক্তি শুধু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয় নয়, এটি গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করা দরকার।
ব্রিটেনে ভারতীয়র বিরুদ্ধে অভিযোগ : পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিয়ো নিউজের খবর অনুসারে, ব্রিটেনে পাকিস্তানের দূতাবাস ভাঙচুরে উসকানি ও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অঙ্কিত লাভ (৪১) নামের এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। রোববার তাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক মুখপাত্র। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে লন্ডনের কিংস্টন অ্যান্ড চেলসিয়া এলাকার লওন্ডেস স্কয়্যারে অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশনের একাধিক জানালা ভাঙচুর করা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই হামলা চালিয়েছিলেন অঙ্কিত এবং তিনি একাই ছিলেন।
বৈঠকে বসছেন মোদি : সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর অনুসারে, জম্মু-কাশ্মিরে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির (সিসিএস) বৈঠকে বসবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ বুধবার গুরুত্বপূর্ণ মোদি ও অন্য মন্ত্রীদের মধ্যে কয়েকটি বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
বুধবার বেলা ১১টায় বৈঠকটি হবে। এতে ভারতের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সিসিএসের সাথে বৈঠকের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ, সিন্ধু নদের চুক্তি বাতিলসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন মোদি।
নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পর রাজনীতি বিষয়ক কমিটির (সিসিপিএ) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। এই কমিটিতে আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, যোগাযোগমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ এবং অন্য জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা। রাজনীতি বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পর মোদি অর্থনীতি বিষয়ক কমিটির সঙ্গেও আলোচনায় মিলিত হবেন।