কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল শুরু হলো আবার

তাওহীদুল ইসলাম।

দীর্ঘ ১৫ মাসের সংস্কার কাজ শেষে অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে অবসান হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষের দৈনিক দুর্ভোগের। কালুরঘাট সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়ার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়া করেন।

কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল শুরুর ভিডিও
রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর এপাড়-ওপাড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। সেতুতে প্রথমবারের মতো ওয়াকওয়ে তৈরি করায় সবার মাঝে কৌতুহল বেড়েছে।

কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে আপাতত কোনো টোল রাখছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে চলতে পারবে না ট্রাক-বাসের মতো ভারী যান।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা সংস্কার কাজ পরিদর্শনকালে কিছু পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে, রাতে সেতুতে যান চলাচল যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য বিভিন্ন পয়েন্টে লাইট রিফ্লেকটিং রং ব্যবহার, পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেসব কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘টোল ছাড়াই আপাতত যানবাহন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তবে বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু দিয়ে বড় ট্রাক ও বাস চলাচল করতে পারবে না। ভূ-সম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে।’

৯০ বছরের পুরোনো এ সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ আগস্ট। প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে সম্প্রতি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন বুয়েটের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল। তারা সংস্কার কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান পরীক্ষা শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যান চলাচলের জন্য সেতু চালু করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

মূলত দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে আসার পরও নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় পুরাতন কালুরঘাট সেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি বহু আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি সংস্কার করা হয়। ভারী ও দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল করতে সেতুর পিয়ারগুলোর নদীর পানির নিচে প্রায় ৬০ হাজার জিও ব্যাগের মাধ্যমে বালি ফেলাসহ মানুষের যাতায়াতে ওয়াকওয়ে এবং রেলপথের উপর সড়ক কার্পেটিং এ বিশেষ নকশা প্রণয়ন করে রেলওয়ে। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের কারণে একমুখী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

কালুরঘাট সেতু দিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানীবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পর এই রুটে দৈনিক ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী জানুয়ানিতে চালু হওয়া রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে কক্সবাজার পর্যন্ত আপাতত আরও কয়েকটি ট্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক