বিজয়া দশমী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক।

আজ সনাতন ধর্মাবলাম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শুভ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে ৫ দিনের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের । তাই, মণ্ডপে-মণ্ডপে এখন বাজছে বিদায়ের ঘণ্টা।

আজ সকালে হবে দশমীর বিহিত পূজা। পূজা শেষে দর্পন ও বিসর্জন। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন।

সনাতন শাস্ত্রমতে, এই নবমী তিথিতে রাবণ বধের পর রাজা শ্রী রামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা।

নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। তাই শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দশভুজা দেবীর পূজা হয়েছে। নীল অপরাজিতা ফুল মহানবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ ও ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়।

পুরোহিতরা জানান

এবার নবমী তিথি শুক্রবার (১১ অক্টোবর) শুরু হয়ে শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৬টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত ছিল। ফলে শনিবার ভোর থেকেই নবমীর বিহিত পূজা সম্পন্ন হয়েছে পূজা মণ্ডপে। এবার তিথি অনুযায়ী, শনিবার নবমী পূজা সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম ছিল। প্রায় পূজা মণ্ডপে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নবমী পূজা শেষ করে ৮টা ৫০ মিনিটে ভক্তরা অঞ্জলি প্রদান করেন। পরে শুরু হয় দশমীর বিহিত পূজা। সকাল ৬টা ১৪ মিনিট থেকে দশমী তিথি শুরু হয়েছে। এই দশমী তিথি শনিবার রাত পৌনে ৪টা পর্যন্ত।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে–এবার তিথি অনুযায়ী, দশমী বিহিত পূজা আজ রবিবার ভোর ৬টা ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম রয়েছে। তাই চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অনেক পূজামণ্ডপে শনিবার সকালে দশমী পূজা সম্পন্ন করা হয়। এ জন্য শনিবার নবমীর পরই দশমী পূজাতে বসেছেন অনেক পূজামণ্ডপের পুরোহিত। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জন হবে আজ রবিবার।

এর আগে গত ৯ অক্টেবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবছর দেবী দুর্গার আগমন করেছে দোলায়। ওই পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, আশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। টানা পাঁচ দিনের আনন্দ উৎসবের পর রোববার বিজয়া দশমীর দিন দেবী বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

শনিবার মহানবমীর দিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। ভক্তরা মণ্ডপে অঞ্জলি ও ভোগ দিয়েছেন। নবমী পূজা ও সন্ধ্যা আরতি শেষে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করে।
দুর্গতি নাশিনী মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধণা শেষ হলে কৈলাশে স্বামীগৃহে ফিরবেন মা দুর্গা। বিজয়া দশমী উপলক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বছরান্তে দেবী দুর্গার আগমনে ৫ দিন দেশের প্রতিটি মন্দিরে বিরাজ করছিল আনন্দ আর উদ্দীপনাময় এক পরিবেশ। মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠা ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা আর শঙ্খ ধ্বনিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে আবহমান বাংলা। উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে নৈসর্গিক নির্জনতা। মন্দিরে মন্দিরে মন্ত্র উচ্চারণ আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে শুভ কামনা করা হয়।

মহানবমীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরে মন্দিরে দেবী দর্শনে আসেন। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

চট্টগ্রামের মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা যায়, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মণ্ডপগুলোতে সকাল থেকে মানুষের আনাগোনা দেখা যায়, যা সন্ধ্যার দিকে উপচেপড়া ভিড়ে পরিণত হয়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তারা নতুন পোশাকে পরিবারের সঙ্গে এসেছে।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিসর্জন

আজ দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার জন্য মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি থানা ও পূজা কমিটিকে বলা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করেছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সৈকতে নামার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ তোফায়েল ইসলাম।

এছাড়াও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকসহ পতেঙ্গা থানা পুলিশ ও পূজা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ছাড়াও পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি এলাকায় কর্ণফুলীতে, কালুরঘাট এলাকায়, কাট্টলী রানী রাসমনি ঘাটে এবং আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতেও প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে।

বিজয়া দশমীতে থাকে সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক