দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা লিয়াকতের ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

মিজানুর রহমান সবুজ।

চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা লিয়াকত আলী।
একসময় তিনি ছিলেন বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এস আলম গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার বিরোাধিতা করে আন্দোলন করেছিলেন। পরে সমঝোতা করে বনে গেছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। ক্ষমতার জোরে অবৈধ উপায়ে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। যার বেশিরভাগই স্ত্রীর নামে। অবৈধ সম্পদ ‘হালাল’ করতে দুদকের চোখে ‘ধুলো দিতে’ চেয়েও পারলেন না বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। প্রায় ৪ কোটি টাকা অবৈধ আয় করে এবার স্ত্রীসহ হলেন মামলার আসামি।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ বাদী তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক।

এ মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে জানা যায়, বাঁশখালীর আলোচিত বিএনপি নেতা ও গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর স্ত্রী জেসমিন আকতারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুদক ১৫ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করে। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।

দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে জেসমিন আক্তার তার নামে ২ কোটি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক যাচাই করে ১৬টি দলিল মূলে তার নামে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। এক্ষেত্রে তিনি ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।

এছাড়া, তিনি সম্পদ বিবরণীতে কোনো অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেননি। অথচ অনুসন্ধানকালে তার নামে দুদক ৮০ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে। অর্থাৎ জেসমিন আক্তার স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

সম্পদ বিবরণী যাচাই করে দুদক তার কোনো দেনার তথ্য পায়নি। তবে যাচাইকালে তার নামে পারিবারিক ব্যয়সহ ৩ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ সম্পদের বিপরীতে তার বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া যায় ১ কোটি ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার। অর্থাৎ তার আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এই সম্পদ এবং ১ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করায় তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ৩ ২৭ (১) ধারার শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আরেক আসামি লিয়াকত আলী বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে সম্পদ অর্জনের সহযোগিতা করায় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।

দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা বা ভিন্ন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে।

কে এই লিয়াকত?

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সখ্যতার কারণে অঢেল সম্পদের মালিন বনে যান তিনি। ২০১৬ সালে গন্ডামারা ইউনিয়নের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করে এস আলম গ্রুপ। শুরুতে চেয়ারম্যান লিয়াকত প্রকল্পের বিরোধিতা করে অনুসারীদের নিয়ে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল লিয়াকতের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে এতে প্রাণ হারান চারজন। বসতভিটা রক্ষা কমিটির ব্যানারে এ আন্দোলনে করেন বিএনপি নেতা লিয়াকত।

পরবর্তী সময়ে লিয়াকতের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হয় এস আলম। সেই থেকে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ভূমি ক্রয়-বিক্রয়, প্রকল্পে শ্রমিকসহ নানা মালামাল সরবরাহ এবং স্ক্র্যাপ ব্যবসার সবই ছিল লিয়াকতের নেতৃত্বে। লিয়াকত ও এস আলমের বন্ধুত্বের কারণে আওয়ামী লীগের আমলেও দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা কোণঠাসা ছিল। পুরো গন্ডামারায় লিয়াকতের কথাই শেষ কথা ছিল।

লিয়াকতের বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি, পুলিশের ওপর হামলা, দস্যুতা, ভয়ভীতি ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ২১টিরও বেশি মামলা রয়েছে। তবে, তাকে গ্রেপ্তার করতে ভয় পেতেন পুলিশ কর্মকর্তারা। লিয়াকতের বাসার আশপাশে সবসময় আগ্নেয়াস্ত্র ও

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক