চার লাখ খাটিয়ে দুই হাজারও উঠল না সৈয়দুলের

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সামুদ্রিক মাছ আহরণে জড়িত মৎস্যজীবীদের দিন কাটছে হতাশায়। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় গভীর সাগরে জাল ফেলতে পারছেন না তারা। গত দুদিনে ৫ শতাধিক ট্রলার অবস্থান নিয়েছে নগরের অভয়মিত্র ঘাটসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায়।

সোমবার সকাল ৬টায় নগরের অভয়মিত্রঘাট ঘুরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোকসানে জর্জরিত মৎস্যজীবীরা। দাদনের টাকা ফেরতে অনিশ্চয়তা নিয়ে কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। ইলিশের ভরা মৌসুমেও লঘুচাপের কারণে এখনো দেখতে পাননি লাভের মুখ। এভাবে চলতে থাকলে রং তুলি দিয়ে ট্রলারে নাম লিখার টাকাও থাকবে না হাতে। এমনটা জানিয়েছেন জেলে সৈয়দুল হক।

তিনি বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে এখানে আটকে আছি। ইতিমধ্যে ট্রলারে মজুদ করা খাবার শেষের পথে। ৪ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে ইলিশ জন্য সাগরে নামলেও এখন পর্যন্ত ২ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে ট্রলার পাহারা দেওয়া লোকের বেতনও দেওয়া যাবে না।’

দাদনদের টাকা ফেরতে দেওয়া মানসিক চাপে আছেন ৩৩ বছর বয়সী নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বছরের বেশিরভাগ সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আবহাওয়া খারাপ থাকায় আমাদের পেশা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে জাল নামালেও আবহাওয়া খারাপের কারণে জো’র সময় সমুদ্রে জাল ফেলা যাচ্ছে না। তার উপর ট্রলার পরিচালনার জন্য ডিজেলসহ বাজারের টাকা লোকসানের খাতায় উঠে গেছে। দাদনদের টাকা ফেরতে দেওয়া মানসিক চাপতো আছেই।’

এদিকে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, পর পর ইলিশের ‘জো’র সময় সাগরে লঘু চাপের কারণে গত বছরের তুলনায় ইলিশ আহরণ নেমেছে চার ভাগের এক ভাগ। মৌসুমের শুরু থেকে এখনো অবদি চট্টগ্রামে ইলিশ আহরণ হয়েছে ৪শ ৫২ মেট্রিক টন। যেখানে গত বছর সেপ্টম্বরের ১৫ তারিখে ইলিশ আহরণ হয়েছে ১৫শ ১৮ মেট্রিক টন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘এই বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইলিশের মৌসুম জেলেদের জন্য ফলদায়ক হচ্ছে না। জুলাই মাসের পর থেকে ৫টি জোর সময় ৩টি নিম্নচাপ ছিল। আবার আগামী অক্টোবর মাসে মা ইলিশ জন্য ইলিশ আহরণ বন্ধ হবে। এর মধ্যে আর বাকি আছে একটি জো। ফলে আবহাওয়া জনিত কারণে মারাত্মক প্রভাব পরেছে ইলিশ আহরণে।’

এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি সপ্তাহে দুদফা নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তাল ঢেউয়ে সাগরে নামতে পারেনি ছোট থেকে মাঝারি আকারের ট্রলার। ফলে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় নগরের বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায় এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে দুই হাজারের বেশি ফিশিং ট্রলার। বন্ধ আছে ইলিশ আহরণ।‌ নগরের অভয় মিত্র ঘাট সহ, আকমল আলী ঘাট, রানী রাসমনি ঘাটসহ কুমিরা ঘাট গতকাল থেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে জেলারা। আগামীকাল দুপুর পর্যন্ত থাকবে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জানিয়েছে চট্টগ্রামের আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক