ইমরান নাজির।
Cvoice24.com
প্রচ্ছদচট্টগ্রাম (মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ)
থানা পাহারায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা চাইলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০:০৩, ৮ আগস্ট ২০২৪
থানা পাহারায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা চাইলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক
বর্তমানে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতে চট্টগ্রামের নগর ও জেলার ৩২টি থানার পাহাড়ায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়াও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
nagad
nagad
সভার শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসকের কাছে দেশে চলমান নৈরাজ্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কিছু দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হচ্ছে, শহর থেকে গ্রামপর্যায়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনার নাম যেন পরিবর্তন করা না হয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ, আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহতের পরিবারকেও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত আক্রোশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে প্রচার করা কুচক্রীমহল রুখতে প্রশাসনের সহযোগিতা।
KSRM
KSRM
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ট্রাফিক এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা টিমকে লেজার লাইট, বড় ছাতা, ট্রাফিক জ্যাকেট এবং পানিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রদান, চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংসকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এরপরেই বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়ক এবং সহ সমন্বয়করা। সমন্বয়ক পুষ্পিতা নাথ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে শুনেছি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন দখলদারিত্বে জড়িয়েছেন যা আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান ক্যাম্পাসে এই দখলদারি যেন করতে না দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা চলছে। যার সাথে সাধারণ ছাত্ররা কোনোভাবেই জড়িত না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক ঈশা দে বলেন, ‘আমাদের দাবি এখন জনগণের কাছে। এখন ফ্যাসিস্ট সরকার পদত্যাগ করেছে তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ফ্যাসিবাদ জিনিসটা কি। ফ্যাসিবাদ ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে না। ফ্যাসিবাদ জনগণের ভেতরেই থাকে, ফ্যাসিবাদ নিজে নিজেই জন্ম নেয়, ফ্যাসিবাদ নিজে নিজেই শাখা-প্রশাখা ছড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণেরও সোচ্চার থাকতে হবে। ‘এই মুহুর্তে দরকার জনতার সরকার’ এই স্লোগান দ্বারা এটাই বোঝায়—এমন প্রতিনিধি থাকবে যারা জনগণের কথা শুনবে, জনগণের সুযোগ সুবিধা বুঝবে। সরকার পদত্যাগের পর অনেক ধরনের নৈরাজ্য ঘটেছে যা কখনই প্রত্যাশিত না। আমার জনগণের প্রতি অনুরোধ আপনারা নিজেরা সংঘবদ্ধ থাকুন।’
‘অনেককে বলতে শোনা যায়—আমরা সংখ্যালঘু আমরা নিরাপদ নই। আমি তাদেরকে বলতে চাই, আমরা বলে আপনারা নিজেরাই নিজেদের আলাদা করে ফেলছেন। সে জায়গায়া আমরা না বলে বলুন আমাদের, আমাদের এলাকার কিংবা দেশের সমস্যা। জনগণ সচেতন হলে এত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাগবে না, এত অপরাধের বিস্তৃতিও বাড়বে না। সেদিকে আমাদের জনগণেরও সোচ্চার থাকতে হবে।’ যোগ করেন ইশা।
সমন্বয়ক রেদোয়ান বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের আশেপাশে যেসব উপজেলা আছে সেসব উপজেলায় নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ আসছে। বিশেষ করে হাসিনা সরকারের আমলের চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা আছেন তাদের ঘর-বাড়িতে অনেকেই হামলা করছে। সেখানে আমাদেরকেও যুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের কারো প্রতি আক্রোশ নেই। আমরা সবাইকে নিয়েই নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। আর ওইসব উপজেলার নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রাম থেকে যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার সাথে একমত পোষণ করে এবং শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা কামনা করে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আপনাদের যে দাবিগুলো রয়েছে বা যে সহযোগিতা আপনারা চেয়েছেন তার প্রায় সকল দাবির সাথে আমরা একমত। আমাদের চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার ১৬ থানা রয়েছে। আর মেট্রোপলিটন এলাকায় রয়েছে ১৬টি থানা। তারমধ্যে নগরের বেশ কয়েকটি থানায় অগ্নিসংযোগ-অস্ত্রলুট করা হয়েছে। আমরা এরইমধ্যে একটি মিটিং করে থানাগুলোতে কি পরিমাণ অস্ত্র ছিল বা গোলাবারুদ ছিল তা নিরুপণ করার চেষ্টা করছি। এর বাইরে লোহাগড়া থানায়ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থী এবং জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনারা অনেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেই অস্ত্র উদ্ধার করে ট্রেজারিতে জমা দিয়ে গেছেন। চট্টগ্রামে কোথাও অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেলে আপনাদের একটি নম্বর দিব সেই নম্বরে যোগাযোগ করবেন।’
জনবলের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের এখন সব কিছু করার মতো জনবলের অভাব রয়েছে। থানায় ফোর্স নেই। এখন একটি ক্রাইম হলে সেখানে কমপ্লেইন করার সুযোগ নেই। আমাদের পুলিশ বাহিনীর মনোবল বাড়ানোর জন্য কাজ করছি।’
থানা পাহারার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, ‘জেলা ও মহানগরের ৩২টি থানাগুলোতে স্ব স্ব এলাকার শিক্ষার্থী, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটসসহ কো অর্ডিনেশন করে তিন শিফটে ১০ জন করে পাহাড়ায় থাকলে পুলিশ নিরাপদ অনুভব করবে। এটা আমাদের একটি অনুরোধ। আপনারা বিবেচনা করবেন।’
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা যদিও পুলিশের বিষয় তবুও আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি অনতিবিলম্বে কিছু সরঞ্জাম আমরা আপনাদের দেব। আর প্রতিষ্ঠানগত যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এই মুহুর্তে থানাতে সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে থানায় ফোর্স বা কনস্টেবল নেই। আর থানাগুলোতে কম্পিউটারসহ যেসব সরঞ্জাম ছিল তা ড্যামেজ হয়ে গেছে। সেগুলো আমাদের আবারও সরবরাহ করতে হবে। সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে আমরা থানা কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছি।’
বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্দর সচল রাখতে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে হবে। আর সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়লে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে। সেজন্য চট্টগ্রামের কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ এবং বৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আপনারা আমাদের তথ্য দেন। যদি আপনাদের কাছে ফুটেজ থাকে সেগুলো আমাকে দেন। যদি বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার হয় সেটির লাইসেন্স বাতিল করবো এবং অবৈধ অস্ত্র থাকলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার করব। চাঁদাবাজি যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।’
উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আবুল বাসার ফখরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘যে কেউ গিয়ে পরিচয় দিলে হবে না। অতি দ্রুত উপজেলা পর্যায়ে আপনাদের প্রতিনিধি দল গঠন করুন। যেন তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করতে পারে। আমাদের তালিকা দিলে আমরা তাদের সাথে সমন্বয় করিয়ে দেব।’
‘সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য আপনারা বলেছেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেখা যায় স্টক আছে কিন্তু বাজারে মাল ছাড়া হচ্ছে না। এই কৃত্রিম ক্রাইসিসের ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়। আপনাদের কাছে সিন্ডিকেটের যেসব তথ্য থাকবে তা আমাদের দিন। আদালতে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মামলার নথি রয়েছে, জমির রেকর্ড রয়েছে। এগুলো রক্ষায় আপনারা এগিয়ে আসুন। এসব নথি অনেকের জীবন।’— বলেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম গোলাম মোর্শেদ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাকিব হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাদি উর রহিম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য আরো নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।