ডিউটি বাদ দিয়ে স্বর্ণ চুরি করেন পুলিশের এসআই আমিনুল

আফতাব উদ্দিন।

নিজের স্ত্রী ও ভাইয়ের বিয়ের জন্য ১৬ ভরি স্বর্ণালংকারসহ কিছু মালামাল আনিয়েছিলেন প্রবাসী আবদুল খালেক। বিমানবন্দর থেকে বাসে করে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন গন্তব্যে। সেই স্বর্ণ ‘ছিনতাই’ করতে ‘অভিযানে’ যান খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম। সঙ্গে নেন দুই সোর্সকে। টাইগারপাস মোড়ে সিগন্যাল দিয়ে বাস থেকে নামানো হয় ওই প্রবাসীকে। এরপর ঘণ্টা দুই নানা ‘টালবাহানা’ করে প্রবাসীর সাথে থাকা স্বর্ণ নিয়েই পালাচ্ছিলেন আমিনুল। কিন্তু এক সোর্সসহ ধরা পড়েন জনতার হাতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিবার (১৯ মে) দুপুরে যখন এতসব ঘটনা ঘটাচ্ছিলেন পুলিশের এই উপপরিদর্শক, তখন তার উপস্থিত থাকার কথা ছিলো থানার নির্দিষ্ট ডিউটিতে। তিনি ডিউটিতে উপস্থিত না থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে খুলশী থানায়।

একইদিন বিকেল ৩টার দিকে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের সময় লালখানবাজার এলাকা থেকে সোর্সসহ আমিনুলকে আটক করে নেওয়া হয় খুলশী থানায়।

স্বর্ণ ছিনিয়ে পালাচ্ছিলেন পুলিশের এসআই
উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি পুলিশে যোগ দেন ২০১২ সালে। আটক ওই সোর্সের নাম শহীদুল ইসলাম জাহিদ (৩৫)। এ ঘটনায় পলাতক আছে আরও একজন। সোর্স জাহিদ নগরের বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকার কেবি আমান আলী সড়কের বাসিন্দা।

আবদুল খালেকের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দরবারশেখ হাজীপাড়া এলাকায়। তিনি ২০ বছর ধরে সৌদিতে বসবাস করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খুলশী থানা প্রাঙ্গণে তাঁর সাথে কথা হয় সিভয়েস২৪ প্রতিবেদকের।

তিনি বলেন, ‘আমি ২০ বছর যাবত সৌদিতে থাকি। আমার বড় ভাই থাকেন দুবাইতে। গত ১২ তারিখ আমি সৌদি থেকে এসেছি। আমার পরিবার এবং ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে ১৬ ভরি স্বর্ণ, দুধ এবং পারফিউম আনার কথা ছিলো। কিন্তু আসার সময় আমি ভুল করে স্বর্ণ ফেলে আসি। আমার ভাই দুজন যাত্রীর মাধ্যমে মালামালগুলো দেশে পাঠান। সেই মালামাল রিসিভ করে আমি রবিবার সকাল ১১টার দিকে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে উঠে ফ্রিপোর্ট নামি। সেখান থেকে ৬ নম্বর রুটের বাসে করে যাচ্ছিলাম। টাইগারপাস মোড়ে খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক আমিনুল আমাকে গাড়ি থেকে নামান। পরে আমাকে একটি অটোরিকশায় তোলেন। তার সাথে আরও দুজন লোক ছিলো।’

খালেক বলেন, ‘আমাকে তারা টাইগারপাস আমবাগান এলাকায় নিয়ে যায়। পরে আমার কাছে থাকা স্বর্ণের ৮ পিস চুড়ির কাগজপত্র দেখতে চায় এসআই আমিনুল। কিন্তু তিনি আমাকে বলেন, তোমার কাছে থাকা স্বর্ণ বৈধ নয়। এরপর তিনি আমাকে ৮টি চুড়ি থেকে ২টি চুড়ি ফেরত দেন এবং বলেন, তোমার চুড়ি ৮টা না দুইটা। যখন আমি তার সাথে তর্ক শুরু করি তখন তিনি অটোরিকশায় করে আমাকে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের মাঝ বরাবর নিয়ে যান।’

‘‘সেখানে আধঘণ্টা আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে আমি আমার মালামাল ফেরত নিতে চাইলে তিনি আমাকে চালান দেওয়ার ভয় দেখান। বলেন, ‘তুমি গাড়িতে উঠে চলে যাও।’ কিন্তু আমি সিএনজি থেকে বের হচ্ছিলাম না। পরে যখন বের হই আমার মালামাল সিএনজিতে ছিলো। সেই অবস্থাতেই পুলিশের ওই এসআই লাফ দিয়ে ফ্লাইওভারের ডিভাইডারের ওপাশে চলে যায়। তখন আমি ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার শুরু করি। তখন এসআই আমিনুল একটি বাইকে উঠে যায়। উঠার সময় দুটি চুড়ি নিচে পড়ে যায়। সেই চুড়ি তুলতে সে আবার বাইক থেকে নামে। আবার ওদিকে সিএনজিতে থাকা ব্যাগসহ দুজন সিএনজি নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমি গাড়ির গ্রিল ধরে ঝুলে থাকি। তখন এসআই আমিনুল কিছুদূর গিয়ে বাইক নিয়ে এসে আবার সিএনজি ব্যারিকেড দেয়।’-যোগ করেন খালেক।

খালেক আরো বলেন, ‘ব্যারিকেড দিয়ে আমাকে নামিয়ে বনফুল কোম্পানির একটি পিকআপে উঠে পালানোর চেষ্টা করে বাকিরা। পরে লোকজন জড়ো হলে তারা এসআইসহ দুজনকে ধরে ফেলে। আরেকজন পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের একটি টহল গাড়ি ঘটনাস্থলে আসে। পরে আমাকে, এসআই আমিনুল এবং ওই সোর্সকে খুলশী থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় আমি মামলা করবো। আমি এর যথাযথ বিচার চাই। পুলিশের দ্বারা মানুষ যেন এরকম হয়রানির শিকার না হয়।’

এদিকে, অভিযুক্ত এসআই আমিনুল ইসলাম ডিউটিতে উপস্থিত না থাকায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ।

তিনি বলেন, ‘ওই উপ-পরিদর্শকের আজ ডিউটি ছিলো। তবে তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। সেজন্য তার নামে জিডিও করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। মামলায় উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম ছাড়াও তার সাথে থাকা জাহেদ এবং পলাতক অজ্ঞাত একজনকে আসামি করা হয়েছে।’

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. মোখলেসুর রহমান এই প্রতিবেদককে রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। স্বর্ণগুলো বৈধ কিনা তা আমাদের যাচাই করার সুযোগ নেই, তবে বাদী বলেছেন সেগুলো বৈধ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক