কিশোরগ্যাং রুখতে চাঁদগাঁও থানার ওসির পরামর্শ

 

চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে কিশোর গ্যাং কালচার। কথায় কথায় মারামারি-হানাহানি কিংবা খুন খারাবি করতেও তারা দুইবার ভাবছে না। তাদের হাত থেকে নিরীহ মানুষ, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক থেকে শুরু করে কেউই রক্ষা পাচ্ছেন না। সবশেষ, কিশোর গ্যাংয়ের মারধরের শিকার হয়ে মারা যান কোরবান আলী নামে এক দন্ত চিকিৎসক।

উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতিতে কিশোরদের বিপথগামী না হতে এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে কি করা প্রয়োজন, কোন কোন কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা প্রয়োজন—এমন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির।

nagad

গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় এক মতবিনিময় সভা করেন। মূলত, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ, অপরাধ দমন সংক্রান্তে কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।

চাঁদগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, ‘বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং সমাজের জন্য মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে । কিশোর গ্যাংয়ের কারণে সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে, এই গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উঠতি বয়সের ১৫ থেকে ১৭ বছরের কিশোররাই কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত হচ্ছে।’

‘তারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে উত্ত্যক্ত করে, ইভটিজিং করে, বকাবকি করে, ভয়-ভীতি দেখায়, হুমকি দেয়, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের উদ্দেশ্যে বাজে মন্তব্য করে, মারামারিও করে। এছাড়া তারা ওই অপরাধের পাশাপাশি মাদকের ভয়াল নেশায় আসক্ত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে এই ধরনের কিশোরদের এবং তাদের অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক এই সভার আয়োজন করেছি।’

অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, উঠতি বয়সী কিশোরদের পারিবারিকভাবে ভাল-মন্দ বিষয়ক শিক্ষা দিতে হবে, তাদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে,  পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলার ব্যাবস্থা করতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দিতে হবে, পারিবারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে, ছেলে কার সাথে মেলামেশা করে তার খোঁজ নিতে হবে, কখন বাসায় ফিরছে এবং কোথায় কার সাথে যায় তার খোঁজ খবর নিতে হবে এবং বিখ্যাত লেখকদের গল্পের বই পড়ায় আগ্রহী করতে হবে।’

এছাড়া, কিশোররা যেন তাদের পরিবারের রোগ না হয়ে ঘরের আলো হয়ে ওঠতে পারে এবং সমাজের বিষফোঁড়া না হয়ে আগামীর ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে এজন্য তাদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা ও যত্ন বৃদ্ধি করারও পরামর্শ দেন ওসি জাহিদুল কবির।

কিশোর গ্যাং সমস্যা ছাড়াও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পুলিশের কাজে সহযোগিতা, অপরাধ বিরোধী সচেতনতা তৈরি, বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, মাদক নির্মুল, জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস দমন, মাদকের কুফল, নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌতুকনিরোধ, বাল্য বিবাহ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার, সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ানো ইত্যাদি বিষয় নিয়েও ওই সভায় আলোচনা করা হয়।

চাঁদগাও থানার ওসি জাহিদুল কবিরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাঁচলাইশ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আরিফ হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন মোহরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন মামুন, থানা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এস এম আনোয়ার মীর্জা, কমিউনিটি পুলিশিং ৪০ নং বিটের সভাপতি আলমগীর, উপদেষ্টা রফিক কোম্পানী প্রমুখ।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক