টানা ছুটি মানে আছড়ে পড়া সাগরের ঢেউয়ের সামনে নিজেকে বিলিন করা, সবুজ পাহাড় সারির বুক ছিড়ে বয়ে চলা লেক, মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, পাহাড়ে, সৈকতে আর সবুজের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলায় মেতে উঠার সুযোগ। এমনই মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট দিয়ে ঘেরা বৃহত্তর চট্টগ্রাম। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুজোর ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এবং ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) মিলে টানা ৫ দিনের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যটন স্পট। ইতোমধ্যে পর্যটন স্পটগুলোর হোটেল-মোটেলের কক্ষগুলোতে শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ বেড়ে গেল রুম ভাড়া। বাড়িতে রুম ভাড়া দিয়েওনমানুষ পাচ্ছেন না রুম। বর্ষার শেষে শীতের আগমনি হাওয়ায় সাজ সাজ রবে পর্যটকের অপেক্ষায় কক্সবাজার। গত দুই ঈদে করোনার ধাক্কা সামলিয়ে চাঙা হওয়া না গেলেও এমন টানা ছুটিতে পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতে চান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার চট্টলার কণ্ঠকে জানান, এবারের ছুটিতে পর্যটকদের আগমন বেশ লক্ষ্যণীয়। ইতোমধ্যে প্রায় শতভাগ হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং হয়েছে। সাজেক, খাগড়াছড়ি, গ্রামছাড়া ওই রাঙামাটি, চোখ জুড়ানো বান্দরবানে আগাম বুকিং হয়েছে হোটেলের রুম। ছুটিকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়েছে পাহাড়ি অর্থনীতি। বান্দরবানে পাহাড়-পর্বত ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলার লেক, স্বর্ণমন্দির, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নাফাকুম, রেমাক্রি, চিম্বুক, নীলদিগন্তসহ সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো পর্যটন স্পট। সবকিছু মিলিয়ে টানা ৫ দিনের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের পদভারে এখন মুখর হয়ে উঠবে বান্দরবান। পর্যটকের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাবে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউজ, রেস্টহাউজ মালিকসহ পর্যটনশিল্পে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বান্দরবানের হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৫ দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক হবে ইনশাআল্লাহ।
বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় প্রায় ৫৫টি হোটেল-মোটেলে আগামী শনিবার পর্যন্ত পর্যটকের আগমন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, ‘আবহাওয়া ও টানা ছুটিতে পাহাড়ে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। শুক্রবার থেকে সে সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছি।’ এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামনুর রশীদ বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলে মোট ৫ দিনের ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নামছে। প্রতিমা বিসর্জন ও পর্যটক নিরাপত্তার জন্য সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তারাও কাজ করছেন। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যরা সব সময় প্রস্তুত। প্রতিটি পয়েন্টে সাদা পোশাকে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেক্স বসানো হয়েছে।
পর্যটক ও পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে পুরো দেশটাই প্রকৃতির আপন হাতে গড়া ‘চোখ জুড়ানো’ ‘মন ভরানো’ এক পর্যটন স্পট। বাংলাদেশের মানুষও স্বভাবগত দিক থেকে ভ্রমণপিপাসু। পরিকল্পিত উপায়ে দেশের বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলোকে গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা গেলে শুধুমাত্র পর্যটন খাতের অবদানেই দেশের অগ্রগতি আরো বেশি মসৃন হতো। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে কথা ও কিছু পদক্ষেপ দেখা গেলেও কার্যত: অগ্রগতি প্রত্যাশিত পর্যায়ের কিছুই হয়নি। এখনো মানুষ বেড়ায় সমূহ অসুবিধা, নিরাপত্তাহীনতা, থাকা-খাওয়ার অতি ব্যয় ও ঝামেলা সাথে নিয়েই।