মুহাম্মাদি আব্দুল্লাহ মুক্কি,চট্রলার কন্ঠ।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর আমীর, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে এই টার্মিনাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিগত স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কুনজর পড়ে এই চালুকৃত ও রাজস্ব খাতের মূল চালিকাশক্তি এনসিটি টার্মিনালের ওপর। দেশের অন্যতম অর্থ পাচারকারী ও শেখ পরিবারের প্রধান অর্থ যোগানদাতা সালমান এফ রহমান ব্যাংকসহ দেশের লাভজনক সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে সর্বশেষ এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’
nagad
nagad
পতিত সরকারের এজেন্ডা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও সরকারের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা ওই সরকারের লোকজন, বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেশের রাজস্ব খাত ধ্বংস করার জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার জন্য এনসিটি টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
‘ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ট কিছু লোকজন সরকারের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা শেখ পরিবারের অর্থ যোগান দেওয়া অব্যাহত রাখার এবং বর্তমান সরকার ও ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ধুলিসাৎ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে যড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।’
KSRM
KSRM
চট্টগ্রাম বন্দরে এনসিটির গুরুত্ব জানিয়ে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশ কাজ হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের মোট হ্যাল্ডলিংয়ের ৫৫ শতাংশ এনসিটি টার্মিনালে হয়। গত অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) এনসিটি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এই টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর বিশাল রাজস্ব আয় করছে। যদি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের হাতে দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে খারাপ হবে।’
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘সর্বপ্রথম ট্যারিফ নির্ধারিত থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হতে বঞ্চিত হবে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে আঘাত হানবে। এছাড়া, দেশের অর্থনীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। এনসিটিতে নিযুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারি এবং উক্ত টার্মিনালে কর্মরত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা চাকুরিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বৈধভাবে বিদেশে চলে যাবে (বর্তমান আয়ের ৫০ শতাংশ)।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসমূহ হস্তান্তরে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষতি হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিবে। বৈদেশিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। বর্তমান কর্মরত দক্ষ শ্রমিকদের মাঝে হতাশা বাড়বে তাদের জীবনমান নিম্নমূখী হবে। অবসর জীবনের অনিশ্চয়তা ও দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পাবে।’
‘যেহেতু ৫৫ শতাংশ আমদানি রপ্তানি এনসিটি টার্মিনাল দিয়ে হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর তথা বাংলাদেশের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যে কোন সময় চ্যালেঞ্জ তৈরি হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। সর্বোপরি এই টার্মিনালের পাশে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত। যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম নগর নায়েবে আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, ডা. এ কে এম ফজলুল হক, সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ শফিউল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহেদুল করিম কচি, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব, কর্মপরিষদ সদস্য হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোসাইন, বন্দর থানা আমির মাহমুদুল আলম, চকবাজার থানার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, কোতোয়ালী থানা সেক্রেটারি মোস্তাক আহমদ, বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইয়াছিন, শ্রমিক নেতা আদনান প্রমুখ।